‘আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো,’ এফআর টাওয়ার থেকে মৃত্যুর আগে তুষার

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে নিহত হওয়ার আগমুহূর্তে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন টাঙ্গাইলের নাহিদুল ইসলাম তুষার। তার সেই কথা উল্লেখ করে মাতম করছেন স্বজনরা।

তুষার মাগুরা জেলা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভানুয়াবহ গ্রামের মো. ইসাহাক আলীর ছেলে তিনি। তার বাবা একসময় সপরিবার মাগুরায় থেকে ব্যবসা করতেন।

তুষারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদী বিলাপ করতে করতে জানান, তুষার বলেছিলেন, “আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরোতে পারব কিনা জানি না। আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে এবং মাফ করে দিতে বলো।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যু হয়।

তুষারের ছোট ভাই শিশির জানান, আটকা পড়ার পর তুষার মোবাইল ফোনে তার বাবা ইসাহাক আলী, মা নূরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও শিশিরের সঙ্গেও কথা বলেন।

“ক্ষমা চাওয়া ছাড়াও ভাইয়া তাকে বাঁচানোর জন্য সবার কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। তারপর বেলা ২টার দিকে ভাইয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।”

তুষার ওই টাওয়ারের দশতলায় হেরিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, বছর চারেক আগে নদীর সঙ্গে তুষারের বিয়ে হলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি।

শুক্রবার ভোরে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদায়ক অবস্থা তৈরি হয়। লাশ সামনে রেখে নিশ্চিত মৃত্যুপথযাত্রী স্বজনকে বাঁচাতে না পারায় সবার আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীও অশ্রুসজল হয়ে যায়।

সকাল ১০টায় বাড়িতে জানাজা শেষে এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মাগুরা জেলা ক্রিকেট দলের প্রশিক্ষক সৈয়দ সাদ্দাম হোসেন গোর্কি বলেন, তুষার একজন মেধাবী ক্রিকেটার। বলতে গেলে তিনি জেলার সেরা বা হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিনি জেলা ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। এছাড়া এইজ লেবেল-এ ১৪, ১৬ ও ১৮ জেলা ক্রিকেট তলের সদস্য ছিলেন।

তুষার মাগুরা সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকার বাংলা কলেজে লেখাপড়া করেন বলে গোর্কি জানান।

তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সুত্রে তার বাবা বছর ১৫ আগে মাগুরা অসেন। তারা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। বছর দুই আগে তারা মাগুরা থেকে চলে যান। তবে মাঝেমধ্যে তুষার মাগুরায় বেড়াতে আসতেন এবং ভবিষতে তার মাগুরায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা ছিল।