পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বিকালে নৌ-বাহিনীর আট সদস্যের ডুবুরি দল ও বিআইডব্লিউটিএ-এর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছে।
নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের পরিচয় মিলেছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। এখনও মামলা হয়নি।
গত সোমবার রাত ৩টার দিকে মেঘনা নদীতে মাটি বোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। নিখোঁজ হন ২০ জন। নিখোঁজদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নে।
মুন্সীগঞ্জ সদরের ইউএনও ফারুক আহম্মেদ বলেন, সকাল থেকেই বিআইডব্লিউটিএ সোনার মেশিনে শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে নদীতে তল্লাশি তৎপরতা শুরু করে। দুপুরে সোনার মেশিনে ট্রলার সদৃশ একটি ধাতব বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন উদ্ধার কর্মীরা। তবে ওই ধাতব বস্তুটি ডুবে যাওয়া ট্রলার নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মনিটরে ভেসে আসা ছবিটি দেখিয়ে ফারুক বলেন, বিআইডব্লিউটিএ-এর ডুবুরি এটি ট্রলার নয় বলে জানিয়েছেন। নৌ-বাহিনীর বিশেষ ডুবুরি দল সন্ধ্যার কিছু আগে দুর্ঘটনাস্থলে এসেছে। এই দলটি শুক্রবার সকাল থেকে অনুসন্ধান কাজে যুক্ত হবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ সন্ধ্যার কিছু আগে দুর্ঘটনাস্থলে আসে। কাছকাছি স্থানে জাহাজটি নোঙর করা হয়েছে। আগে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি শনাক্ত করার পরই প্রত্যয়ের ক্রেনে করে ট্রলারটি তীরে উঠিয়ে আনা হবে। এখনও দুর্ঘটনাস্থলটি শনাক্ত করা যায়নি।
নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি
ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বেরুল ইসলামকে প্রধান করে নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে।
কমিটির বাকি আট জন হলেন ইউএনও মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও গজারিয়া সার্কেল), সংশ্লিষ্ট এলাকার কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা, নৌ পুলিশের কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকর্তা।
কমিটির প্রধান মোবাশ্বেরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে জানান, ট্রলারটি উদ্ধার এবং ধাক্কা দেওয়া জাহাজটি শনাক্ত পরবর্তী দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সার্বিক সহায়তা ও উদ্ধার তৎপরতায় এই কমিটি ভূমিকা রাখবে। কমিটির সকল সদস্য বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থলে অবস্থান করেছেন।
এখনও মামলা হয়নি
ট্রলারডুবির এ ঘটনার তিন দিন পরও মামলা হয়নি।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-গজারিয়া) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, মামলার প্রস্তুতি নেওয়া আছে। তবে এখনও ট্রলারটি শনাক্ত না হওয়ায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ট্রলারটি শনাক্ত হলে এটি যে থানা এলাকায় পড়েছে সে থানায় মামলা হবে।
কমোডোর মোজাম্মেল আরও বলেন, ডুবে যাওয়া দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ ফুট। এ সকল নৌযানের কোনো অনুমোদন বিআইডব্লিউটিএ দেয় না। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া ডুবে যাওয়া ট্রলারটির কোনো নামও নেই। এর মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রলারটির চালকও পলাতক রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনাস্থলও সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
নিখোঁজ ২০ জনেরই পরিচয় মিলেছে
নিখোঁজরা হলেন- পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুণ্ডমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-১, আব্দুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-২, লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম।
দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন।
মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চণ্ডিপুর গ্রামের আমির খান ও আব্দুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী, রজব আলীর ছেলে শফিকুল এবং জনৈক সিরাজ মিস্ত্রী।