ট্রলার ডুবে নিখোঁজ ২০: পাবনার তিন গ্রামে মাতম

মুন্সিগঞ্জের মেঘনায় ট্রলার ডুবে ২০ শ্রমিক নিখোঁজের খবরে পাবনার পাশাপাশি তিন গ্রামে মাতম করছেন স্বজনরা।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2019, 07:47 AM
Updated : 17 Jan 2019, 10:34 AM

নিখোঁজদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নে পাশাপাশি তিন গ্রামে। তাদের মধ্যে শুধু মুণ্ডুমালা গ্রামেরই রয়েছেন নয়জন। এছাড়া দাসমরিচ গ্রামের ছয়জন ও চণ্ডীপুর গ্রামের দুইজন রয়েছেন।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরঝাপটা এলাকায় মেঘনায় সোমবার রাত ৩টার দিকে তেলের ট্যাংকারের ধাক্কায় ৩৪ শ্রমিক নিয়ে মাটিবোঝাই একটি ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় ১৪ জন ফিরতে পারলেও ২০ শ্রমিক নিখোঁজ হন।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী মোল্লার ছেলে শাহ আলম ফিরে আসা ১৪ জনের মধ্যে একজন।

শাহ আলম বলেন, “স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আমরা কয়েকজন প্রাণে বাঁচলেও দলের বেশির ভাগ বন্ধুর জীবনের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই।”

ইউনিয়নজুড়ে শোক চলছে বলে জানিয়েছেন খানমরিচ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান।

তিনি বলেন, “আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র। প্রায় সবাই শ্রমজীবী। বিনা মেঘে বজ্রপাতে স্বজন হারিয়ে অকুল পাথারে পড়েছে পরিবারগুলো। একদিকে স্বজন হারানোর শোক অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও নেই আমার।”

ফিরে আসা আরেক শ্রমিক হলেন একই উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে মামুন আলী প্রামানিক।

সেদিন কী ঘটিছিল সে সম্পর্কে মামুন বলেন, “ট্রলারের সামনের দিকে ছিলাম আমি আর পেছনের দিকে ছিলেন শাহ আলমসহ অন্যরা। ট্রলারটি তেলের ট্যাংকারে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যাওয়ার মুহূর্ত আমরা বের হয়ে পানিতে পড়ি।

“অন্ধকারে চারদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে আমরা ঠাণ্ডা পানির মধ্যে সাঁতরে ভেসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল মৃত্যু খুবই কাছে। পরিবারের কথা মনে পড়ছিল। আর ১০ মিনিট পানিতে থাকলে মারা যেতাম।”

তীরে ফিরলেন কিভাবে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, “মাটিবোঝাই ট্রলার নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে না পৌঁছানোর কারণে মালিকপক্ষ মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। সন্দেহ হলে তারা তখন আরেকটি ট্রলার নিয়ে আসেন। তারা আমাদের উদ্ধার করেন।”

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ট্রলারের খোঁজ মেলেনি।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহম্মেদ বলেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও ট্রলার শনাক্ত করা যায়নি।

তবে ট্রলার মালিকের খোঁজ মিলেছে বলে তিনি জানান।

ইউএনও বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলির এলাকার জাকির দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি এই ট্রলারের মালিক। তার ইটভাটার ব্যবসা রয়েছে।

“ট্রলার ডুবির খবরে তিনি স্ট্রোক করেছেন বলে খবর পাওয়া গেলেও মালিকপক্ষের কারও সঙ্গে এখনও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।”