সকালে চাঁদপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঈদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
নামাজ শেষে যথারীতি পশু কোরবানিও দেয়া হয়েছে এসব এলাকায়।
চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করেন মুসলমানরা। এবার ১২ অগাস্ট সেপ্টেম্বর জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলমান ঈদ করবেন বুধবার।
তবে একদিন আগে চাঁদ দেখায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মঙ্গলবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন পীরের অনুসারীরা বরাবরই রোজা, ঈদ, শবে-বরাত, শবে-মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পালন করেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেরার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক লোক ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শহরের দুলদুল মিয়ার চাতালে অস্থায়ী ঈদগাহ ময়দানে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন রেজাইল ইসলাম।
হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুন্সী জানান, দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে হরিণাকুণ্ডুর চিথলীপাড়া, ভালকী, বৈঠাপড়া ও ফলসিসহ কয়েক গ্রামের মানুষ ঈুদল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন।
চট্টগ্রাম
মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফ ও চন্দনাইশের জাহাঁগিরিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায়ের পর কোরবানি করেন।
সকাল নয়টায় সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরিফে মওলানা মাকসুদুর রহমানের ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জামাত হয় বেলা ১০টায়।
চন্দনাইশন উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফে আল্লামা শাহ্সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর ইমামতিতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এ দুটি দরবারের অনুসারী সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল, গাটিয়াডাঙা, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হারালা, বাইনজুরি, কানাই মাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, দোহাজারী ও জামিরজুরি, বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা ও ছনুয়া, আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ও তৈলারদ্বীপ, লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা, কলাউজান, বড়হাতিয়া এবং পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার কিছু এলাকাসহ চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন।
এছাড়াও সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, উখিয়া, বান্দরবান, মহেশখালী, আলীকদমের কিছু এলাকায়ও ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
প্রায় দুইশ বছর আগে সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের তৎকালীন পীর মওলানা মুখলেছুর রহমান (রহ.) পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলেই রোজা, ঈদ ও কোরবানি পালনের নিয়ম প্রবর্তন করেন।
এরপর থেকেই মির্জাখীল দরবারের অনুসারীরা এ নিয়ন পালন করে আসছেন।
চাঁদপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে মঙ্গলবার কোরবানির ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।
সকাল ৯টায় ফরিদগঞ্জের টোরা মুন্সীরহাটে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা রহমত উল্যাহ।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইছহাক ১৯৩৩ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের এই রীতি চালু করেন। ইছহাকের মৃত্যুর পর তার ছয় ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, বেলচো, জাঁকনি, প্রতাপপুর, গোবিন্দপুর, দক্ষিণ বলাখাল। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেনাগাঁও, বাসারা উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাট, মূলপাড়া, বদরপুর, পাইকপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতাড়া, নুরপুর, শাচনমেঘ, ষোলা, হাঁসা, চরদুখিয়া এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার দশআনী, মোহনপুর, পাঁচআনী ও কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রামে এই মতের অনুসারী মুসলমানরা এদিন ঈদের নামাজ পড়ে পশু কোরবানি দিচ্ছেন।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডারের মুন্সীপাড়া, কাকিনার রুদ্রেশ্বর, চন্দ্রপুরের বালাপাড়া ও গোড়লের শালমারা এলাকার প্রায় পাঁচশ পরিবার মঙ্গলবার আরবের সঙ্গে মিল রেখে কোরবানির ঈদ করছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের মুন্সীপাড়ায় এ মতের অনুসারীরা ঈদের জামাতে অংশ নেন। নামাজ পরিচালনা করেন খতিব মাওলানা আব্দুল হামিদ।
মুন্সীপাড়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি মাওলানা মাছুম বিল্লাহ বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পাঁচ বছর ধরে তারা সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
সাতক্ষীরা
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে সাতক্ষীরার তিন উপজেলার তিনটি স্থানে ঈদুল আজহার ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার বাওকোলা পূর্ব-পাড়া জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মওলানা মহব্বত আলী।
সদর উপজেলার সাতানি, ভাদড়া, বাওকোলা, মৃগিডাঙ্গা, মল্লিকপাড়া, ভাড়ুখালি, মাহমুদপুর ও তালা উপজেলার ইসলামকাটি ও সুজনশাহা গ্রামের শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এছাড়া সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা, চাঁদপুর ও কালিগঞ্জে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মওলানা মহব্বত আলী বলেন, “পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ উদযাপন করা যায়।”
মুন্সীগঞ্জ
জেলার নয় গ্রামে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে মঙ্গলবার ঈদুল আজাহা উদযাপিত হচ্ছে। গ্রামগুলো হচ্ছে সদর উপজেলার আনন্দপুর, শিলই, নায়েবকান্দি, আধারা, মিজিকান্দি, কালিরচর, বাংলাবাজার, বাঘাইকান্দি ও কংসপুরার একাংশ।
সকালে জামাতে ঈদের নামাজ শেষে কোরবানি করেন তারা।