‘প্রিজন্স অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ হচ্ছে: রাষ্ট্রপতি

কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রিজন্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 12:26 PM
Updated : 20 March 2018, 12:51 PM

মঙ্গলবার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে কারাসপ্তাহ-২০১৮ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৩টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কারাগারের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টরসহ আধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে।

“কারাগারগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দিদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ‘প্রিজন্স অ্যাক্ট’ পরিবর্তন করে নতুনভাবে ‘প্রিজন্স অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে।”

এছাড়া কারা প্রশাসনের দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধনাগারে পরিণত হচ্ছে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি।

কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে তিনি ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাই কারাগারের জীবন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতাও কম নয়।

“আমাদের জাতির পিতাকেও রাজনৈতিক কারণে ১৪ বছরের অধিক সময় কারাগারে কাটাতে হয়। জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় আমাদের জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তির পূর্বে পুনঃসামাজিকীকরণ এবং মুক্তির পর নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুসরণে ‘উম্মুক্ত কারাগার’ নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দিদের প্রাকমুক্তি পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে এবং তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে যা পুনঃঅপরাধরোধে সহায়ক হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ মানুষকে অপরাধী করে তোলে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী মানুষগুলোর নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

জেল-এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বন্দিদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ সকলের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।

বন্দির হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তরের জন্য কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যেগ অন্যতম। কারা শিল্পে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের প্রদান করার সিদ্ধান্ত একটি সময়োচিত পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।

“কারাবন্দিদের মানষিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য ‘মোবাইল ফোন বুথ’ চালু একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ সকল পদক্ষেপের পলে কারাবন্দিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবে বলে আমি আশা করি।”

রাষ্ট্রপতি কারাকর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কারা বিভাগে জনকল্যালমূলক কাজে নিজেদেরকে তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারাগারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পেশাগত দক্ষতা অর্জন। আর তা অর্জনে প্রশিক্ষণ অপরিহার্য।

রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ উদ্বোধন এবং কেরাণীগঞ্জে আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি’ স্থাপন এ লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে তিনি মনে করেন।

বর্তমান বিশ্বেও কারাগারকে শাস্তি কার্যকরের স্থান নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য করা হয়। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কারাকর্মকর্তাদের প্রতি নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

কারাগারে আটক বন্দিদের অগ্রহণযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সংশোধন করে সমাজে স্বাভাবিক বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।  

দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী যেন কারাগারের ভেতরে অভিনব কায়দায় জঙ্গি পরিকল্পনা বা সন্ত্রসী কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে কারাকর্মকর্তাদের মনোবল দৃঢ় রাখার আহ্বান জানান তিনি।   

এর আগে রাষ্ট্রপতি বেলুন উড়িয়ে কারাসপ্তাহ উদ্বোধন করেন এবং খোলাজিপে চড়ে কারামহাপরিদর্শকের সঙ্গে  প্যারেড পরিদর্শন করেন।

কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সাত কারাকর্মকর্তাকে পুরস্কারের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।   

অনুষ্ঠানে বেস্ট প্রডাক্টিভ জেল হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারকে অ্যাওয়ার্ড (ক্রেস্ট) দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন ওই ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। এছাড়া কাশিমপুর-২-এর ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন, কুমিল্লার ডেপুটি জেলার শাহনাজ বেগম ও নারায়ণগঞ্জ জেলের ডেপুটি জেলার তানিয়া জামানকে অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং চট্টগাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার রিজিয়া বেগম বেস্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড, মহিলা কারারক্ষী তারানা পারভীনকে বেস্ট ইনস্ট্রাক্টরের পুরস্কার  দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্টমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জান খাঁন, স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, কারামহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।