ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হওয়া নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এক ঘুষের মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 24 May 2017, 04:56 PM
শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে নারাণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত বুধবার সকালে শ্যামলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এরপর বিকালে এই শিক্ষক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক অশোক কুমার দত্ত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে শ্যামলের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান।
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসা শ্যামল কান্তি ভক্ত এদিন আদালতে সাংবাদিকদের বলেন, তাকে চাপে রাখতে ‘প্রভাবশালী এক ব্যক্তির নির্দেশে ষড়যন্তমূলকভাবে’ ওই মামলা করা হয়েছে।
আদালত জামিন নাকচ করে দেওয়ার পর হাতকড়া পরিয়ে তাকে টেনে প্রিজন ভ্যানে তুলে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আদালতপাড়ায় বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মত।
বাদীর আইনজীবী মো. মহসিন মিয়া বলেন, “ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং আসামির আত্মসর্মপণের পর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।”
এরপর ২৭ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, এক ছাত্রকে মারধর এবং এক শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে তিনটি মামলার আবেদন নারায়ণগঞ্জের আদালতে জমা পড়ে।
প্রাথমিক শুনানি করে আদালত প্রথম দুটি মামলার আবেদন খারিজ করে দিলেও ঘুষের অভিযোগের বিষয়টি বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়।
এ মামলার বাদী পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের অভিযোগ, চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে তার কছে থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি তা করে দেননি।
তদন্ত শেষে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ গত ১৭ এপ্রিল শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বুধবার সকালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর শ্যামল কান্তি আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “যে সময় ঘুষ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তখন শীতলকালীন বন্ধ ছিল। আমাকে হয়রানি করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে।”
পুলিশ আগে থেকেই ‘প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির’ পক্ষে কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে খুশি করার জন্যই পুলিশ এ ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।”
শ্যামল কান্তির স্ত্রী সবিতা হালদার বলেন, “আমার স্বামীকে লাঞ্ছিত করার আগে এই ধরনের কোনো অভিযোগ ছিল না। যদি থাকত, তাহলেতো আগেই মামলা হত। পেছনের দিনের ঘটনা সাজিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে।”
পেশায় সেবিকা সবিতা বলেন, তার স্বামী হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। লাঞ্ছনার ওই ঘটনার পর আরও কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।
“বন্দর থানার এস আই মোখলেছুর রহমান আমাদেরকে সাংসদের সঙ্গে মিলে যাওয়ার জন্য বার বার চাপ দিয়েছেন। ওই এস আই বলেছে, সাংসদ আমাদেরকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে দেবে, আমরা যেন নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু আমার স্বামী বলেছেন, আমরা কেন নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাব?”
সবিতা বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক একা শিক্ষক নিয়োগ করতে পারেন না। এটা করে ম্যানেজিং কমিটি। তার স্বামীকে ‘মিথ্যা মামলায়’ হয়রানি করা হচ্ছে।
শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনা হলে সাংসদ সেলিম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, শিক্ষককে নয়, নাস্তিককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
পরে হাই কোর্টের নির্দেশে ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলাম ধর্ম বা আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বরং তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে সাংসদ সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয় আদালতের নির্দেশে। আগামী চার ৪ জুলাই ওই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রয়েছে।