কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের ইতিহাসে এবারই টানা ১৩২ দিন নিষেধাজ্ঞা ছিল।
Published : 31 Aug 2023, 10:36 AM
দীর্ঘ চার মাস ১২ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে নামছেন জেলেরা। সেজন্য জেলেপল্লি ও ফিশারি ঘাটে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।
কাপ্তাই হ্রদের ইতিহাসে এবারই টানা ১৩২দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
গত ১৯ জুলাই তিনমাসের মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দুই দফায় তা আরও এক মাস ১২ দিন বৃদ্ধি করা হয়।
জেলে ও ব্যবসায়ীদের আশা, দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে তাদের জালে। আর অধিক রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশা করছে বিএফডিসি।
শহরের অদূরেই নতুন জেলেপল্লি ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে পল্লি জুড়ে ব্যস্ততা। এর মধ্যেই জেলেরা তাদের নৌকার আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে হ্রদের পাড়ে রেখেছেন। কেউবা মাছ পরিবহনের বোটে রং লাগানোর কাজে ব্যস্ত দিন পার করছেন। ঘরে বাইরে চলছে জাল পরিচর্যার কাজ। বসে নেই নারীরাও, পুরুষের পাশাপাশি পুরাতন জাল সংস্কার বা নতুন জাল সেলাইয়ে ব্যস্ত তারা।
জেলে মতিলাল দাস বলেন, “তিন মাসের জায়গায় প্রায় সাড়ে চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। আশা করছি এবার আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে।”
পুরান জেলে পাড়ার বাসিন্দা সজল দাশ অভিযোগ করে বলেন, “তিন মাসের ভিজিএফ ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই মাস পেয়েছি। আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। তবে খুলে দেওয়ার খবরে আমরা খুবই খুশি।”
৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য সাধারণত প্রতিবছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়।
তবে এবার হ্রদে ১ মে এর পরিবর্তে আরও এগিয়ে এনে ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
কিন্তু তার মধ্যেও স্বাভাবিক সময়ে হ্রদে কম বৃষ্টিপাত ও ভারতের মিজোরাম থেকে পানি না আসায় হ্রদের পানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। ফলে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি।
বিএফডিসির তথ্য অনুযায়ী, হ্রদে ১০৫ এমএসএল (মিনস সী লেভেল) পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে উঠতে ও মা মাছগুলো প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়।
এই কারণে জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করে। বর্ষার শেষ মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হওয়ায় দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে হ্রদে মৎস্য আহরণ।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, আশা করছি এবার মাছের আহরণ ভালো হবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। বর্ষার শেষদিকে বৃষ্টিপাতের পর মাছ বৃদ্ধিতে কিছুটা সময় পাওয়ায় আশা করছি মাছের আকারও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য বছর মাছ আহরণ শুরুর প্রথম কয়েকদিন মাছের প্রচুর চাপ থাকে, কিন্তু এত মাছের জন্য পর্যাপ্ত বরফ এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থা না থাকায় মাছ ঘাটেই পচে যায়।
“আমাদের দাবি ছিল, প্রথমদিকে কয়েকদিন একবেলা করে মাছ অবতরণ করা হোক। সেটাও এবার প্রশাসন নির্ধারণ করে দিয়েছে, অর্থাৎ সকাল ১২টা পর্যন্ত আসা বোটগুলো থেকে ঘাটে মাছ অবতরণ করা হবে।”
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “পল্টুন মেরামত, মাছের অবতরণ ঘাটগুলো পুনঃসংস্কারসহ নানান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। মাছের অবতরণ সময় নির্ধারণসহ ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছি।”
“যেহেতু এবার দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল আশা করছি ভালো পরিমাণ মাছ আহরণ হবে। এতে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে”, বলেন এই কর্মকর্তা।