তবে মামলার একমাত্র আসামি ওই সৎ বাবা ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন।
Published : 04 Apr 2024, 09:41 PM
সিলেট নগরীর বালুচরে দেড় বছরের শিশু হত্যার ১৪ বছর পর সৎ বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রমাণিক এ রায় ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন আদালতটির পিপি মো. ফখরুল ইসলাম।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার ফরিকটিলা ধুপিপাড়ার (বাবুপাড়া) রশিদ আলীর ছেলে চাঁন মিয়া (৩৫)।
তিনি সিলেট নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফ্ফারের কলোনির বাসিন্দা ছিলেন। তবে ঘটনার পর থেকেই চাঁন মিয়া পলাতক রয়েছেন।
মামলার নথির বরাত দিয়ে পিপি ফখরুল ইসলাম জানান, ১৪ বছর আগে চাঁন মিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয় নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা থানাধীন ওই শিশুটির মায়ের।
চাঁন মিয়া তার স্ত্রী ও স্ত্রীর আগের স্বামীর তিন সন্তানসহ সিলেট নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফ্ফারের কলোনিতে বসবাস করতেন।
কিন্তু সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে রেখে আসার জন্য ক্রমাগত স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন চাঁন।
মামলায় বলা হয়, এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হত। পাশাপাশি চাঁন মিয়া শিশু তিনটিকে মারপিটও করতেন।
ঘটনার দিন (২০১০ সালের ৩১ অগাস্ট) আলমগীর নামে দেড় বছরের শিশুটি কান্নাকাটি করলে চাঁন মিয়া তাকে মারধর করেন। পরে ওইদিন সন্ধ্যার দিকে এলাকার উত্তর বালুচর ২ নম্বর মসজিদের পাশের দোকান থেকে দুধ আনার কথা বলে শিশু আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বের হন চাঁন মিয়া। কিন্তু দোকানে না গিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে শিশু আলমগীরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ পুরান ক্লাবের মাঠে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান সৎ বাবা।
এদিকে, শিশুপুত্রকে কোথাও না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন মা। পরদিন সকাল ৮টার দিকে ওই ক্লাবের মাঠে শিশুটির লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে চাঁন মিয়াকে আসামি করে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি আসামি চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই মো. আব্দুর রহিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১২ সালের ২ অক্টোবর আসামি চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার কাজ শুরু করে আদালত।
দীর্ঘ শুনানি ও ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত চাঁন মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাবাসের দণ্ড দেয়।
মামলার অন্য একটি ধারায় চাঁন মিয়াকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন একই আদালতের বিচারক।