“আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটাও যেন গুলি না চালায়।”
Published : 13 Sep 2024, 10:05 PM
“জেলে যাওয়ার পর ভাবিনি আর কখনও স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখতে পাবো। এটাও ভাবিনি, এতো দ্রুত ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হবে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের প্রতি। যিনি নতুন করে দ্বিতীয়বার পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরা ফরিদ আহমদ শাহিন। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম পৌর সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ১৪ প্রবাসী দেশে ফেরেন। তাদের মধ্যে শাহিনও ছিলেন।
গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, সে সময় তাতে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিলেন বাংলাদেশিরা। ২০ জুলাই সন্ধ্যায় দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভের সময় ৫৭ বাংলাদেশিকে আটক করে আমিরাতের পুলিশ।
দুদিন পর দাঙ্গা, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং সম্পদহানীর অভিযোগে তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় স্থানীয় আদালত। এরপর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার।
এরই মধ্যে ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমা পান সেই ৫৭ বাংলাদেশি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই প্রবাসীদের ক্ষমা করে দেন আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।
শুক্রবার সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শাহিন। এ সময় বিদেশের মাটিতে সাজা ও জেলে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ৪৭ বছর বয়সী শাহিন বলেন, “আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম স্বৈরাচারী হাসিনা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটাও যেন গুলি না চালায়। আমরা জানতাম প্রতিবাদ করলে রাজতন্ত্র আইনে আমাদের শাস্তি পেতে হবে। সেই শাস্তিকে উপেক্ষা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম।
“দেশটির পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো উপায় দেখছিলাম না। সারাক্ষণ পরিবারের দুশ্চিন্তায় সময় কেটেছে। অবিরত চোখের পানি ফেলেছি। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছিল, আল্লাহ আমাদের এই অন্ধকার কুঠুরি থেকে মুক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দাও।”
বিদেশের কারাগার জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি এখনও তাড়া করে বলে শাহিন জানান। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, “টানা ৪৫টা দিন আমার কাছে কয়েক‘শ বছরের মতো লেগেছিল। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বন্দি জীবনে দেখা হয়নি কারও সঙ্গে। দিন যতই গড়াচ্ছিল, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। ভাবিনি স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আবারও দেখা হবে’
“বিদেশের কারাগার জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি এখনও তাড়া করছে আমাকে। ভেবেছিলাম জীবনে আর দেশে ফিরতে পারব না। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন শুনলাম আমাদের মুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তার কয়েকদিন পর শুনলাম আমিরাতের রাষ্ট্রপতি আমাদের সাধারণ ক্ষমা করে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর আমার কাছে সেটিই ছিল।”
তিনি বলেন, “মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ও দেশের বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা মুক্ত হয়েছি।”