“এই হামলা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তঃদেশীয় পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
Published : 03 Dec 2024, 10:21 PM
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।
মঙ্গলবার ফেনী, সিলেট, টাঙ্গাইল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদ।
এ সময় বক্তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, এই হামলা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তঃদেশীয় পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সোমবার দুপুরের দিকের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ মিশনের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে হামলা চালায়। পরে তারা সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে বলে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ মন্তব্য করে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব কূটনৈতিক মিশন ও সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
ফেনী:
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার প্রতিবাদে ফেনীতে মানববন্ধন করেছে খেলাফত মজলিস ফেনী শহর শাখা।
মঙ্গলবার বিকালে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী যুব মজলিসের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা আজিজ উল্লাহ আহমদী।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে একের পর এক মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে পুলিশের সামনে হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারও অবমাননা করে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। আমরা ভারতীয় উগ্রবাদীদের এসব আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনো সভ্য দেশে এই ধরনের বিদেশি দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে না। ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর জন্য ভারত সরকারকে কড়া বার্তা দিতে হবে। খুনি শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ইসলাম ও দেশের প্রশ্নে বাংলাদেশের জনগণ কাউকে ছাড় দেবে না।”
খেলাফত মজলিস ফেনী শহর শাখার সভাপতি মাওলানা মো. ইউনুসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে খেলাফত মজলিস নোয়াখালী জোনের সহকারী পরিচালক প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ আলী মিল্লাত, ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা মোজাফফর আহমদ জাফরী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সানাউল্লাহ, ফেনী শহর শাখার সহসভাপতি মাওলানা ফজলুল করীম, ফেনী সদর উপজেলা সভাপতি মাওলানা করিমুল্লাহ ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল কাশেম, দাগনভুঁইয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সা’দ উদ্দিন, ইসলামী ছাত্র মজলিস ফেনী জেলা সভাপতি আবদুল আউয়াল রাকিব, সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবুল বশর, সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল নাঈম, শহর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়:
বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মশাল মিছিলটি বের হয়।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বটতলা এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘দূতাবাসে হামলা কেন, নরেন্দ্র মোদী জবাব দে’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধ্বংস হতে দেব না’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাঁড়াও জনগণ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, “ভারত বার বার বলতে চেয়েছে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল যার ফলে নাকি আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি। এই স্বীকৃতি নিয়ে তারা আমাদের দেশ থেকে যত ধরনের সুবিধা নেওয়া যায় সবকিছু নিয়েছে। দুঃখের বিষয় এই যে, ফ্যাসিস্ট শাসকের সময় ভারত আমাদের দেশ থেকে যেসব সুবিধা পেত গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত সরকার এই সুবিধা দিতে একবারের জন্যও না করেনি।”
“আমাদের দেশের মানুষ এখনো পানির ন্যায্য হিস্যা পায় না, সেই পানি ভোগ করে ভারত। আমাদের দেশের নদীর যে স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি তা কোনোভাবেই বজায় থাকেনি এই ভারতীয় আগ্রাসনের কারণে। জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার এসেছে এখন পর্যন্ত তারা এই বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। গতকাল বাংলাদেশের দূতাবাসে যে হামলা হয়েছে তার কোনো সুরাহা এখন পর্যন্ত হয়নি। ভারত যত বড় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হোক না কেন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনগণকে শাসন করতে পারবে না।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইমন বলেন, “ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসে স্থানীয় কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী একত্রিত হয়ে হামলা করেছে। যেটা সরাসরি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা করার শামিল। আমাদের দেশের ওপর হামলার জন্য যতটুকু দায় নেওয়া উচিত, আমাদের দেশের দূতাবাসের ওপরেও হামলার জন্য ততটুকু দায় নেওয়া উচিত। ভারতকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনাদের তাবেদার শেখ হাসিনার শাসনামল শেষ হয়েছে। বাংলাদেশকে আগের চোখে দেখলে আপনারা ভুল করবেন।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়:
বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির সভাপতি মো. আশরাফ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক খালিদুর রহমানের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই হামলা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তঃদেশীয় পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ এনে এতে বলা হয়, “আমরা জোরালোভাবে বলতে চাই যে, কূটনৈতিক মিশনের ওপর এ ধরনের সহিংসতা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এটি যে কোনো সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার শামিল।”
এ সহিংস ঘটনার যথাযথ বিচার চেয়ে জিয়া পরিষদের শিক্ষকরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করা হোক; অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং এই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক।
সিলেট.
বাংলাদেশ মিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে বসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। সীমান্তের কাছাকাছি এসে আমাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে, এদেশের মানুষ আর ভয় পায় না।”
তিনি বলেন, “আমরা যেভাবে ভারতের প্রতিটি দূতাবাস ও কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিচ্ছি, ঠিক সেভাবেই আমাদের প্রতিটি দূতাবাস ও কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ভারতের। এ ক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাসসমূহে যদি আর কোনো হামলা হয় তাহলে আমরা ধরে নেব এটির পেছনে পালিয়ে যাওয়া অপশক্তির ইন্ধন রয়েছে।”
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব অপশক্তি ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য রাজপথে রয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নজিবুর রহমান নজিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীরা অংশ নেন।
টাঙ্গাইল:
বাংলাদেশ মিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্থানীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মশাল মিছিল বের হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় শহীদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সভায় মিলিত হয়।
এতে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম, আল আমিন, ফাতেমা রহমান বিথি, আল আমিন সিয়াম, আবু আহমেদ শের শাহ।
মশাল মিছিলে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় আগ্রাসন কখনোই মেনে নেবে না।