মারা যাওয়া গাছগুলো ঘরের উপর ভেঙে পড়ার শঙ্কায় আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Published : 28 Feb 2023, 05:21 PM
খাগড়াছড়িতে গাছের বাকল বা ছাল তুলে বৃক্ষ হত্যা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ছাঁটাই করার সময় এভাবে গাছের বাকল তুলে ফেলছেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা।
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের দুই ধারে গিরিফুল এলাকা থেকে গাছবান শিবমন্দির এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৩০টি রেইন ট্রি’র বাকল তিন থেকে চার ইঞ্চি গভীর থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে গাছ মারাও গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী এসব গাছের মালিক খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, “খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের গাছের ছাল তুলে ফেলায় অনেকগুলো গাছ মারা গেছে। আমরা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দায়ী করে গত বছর খাগড়াছড়ি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।”
সরেজমিনে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে গাছবানের শিবমন্দির এলাকার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে সড়কের গিরিফুল এলাকায় আটটি গাছের ছাল তুলে ফেলায় সেগুলো মারা গেছে।
কুকিছড়া ব্রিজ এলাকায় ১৩টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়। এর মধ্যেই গাছগুলো শুকিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে এসব গাছও মারা যাবে।
এ ছাড়া গাছবানে ছয়টি, ছোটনালা ব্রিজ এলাকায় একটি, ১২ নম্বারে দুইটি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে।
গিরিফুল এলাকায় সড়কের পাশেই স্থানীয় বাসিন্দা সাচিং মারমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বর্ষাকালের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লাগায় তারা গাছের ছাল তুলে ফেলেছে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়।”
খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের পাশেই প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন ঘরে পেয়ে বসবাস করছেন কুসমতি ত্রিপুরা।
তিনি জানান, বিদ্যুতের যে লোকজন গাছের ডালপালা কাটে তারাই ছাল তুলে ফেলেছে। মারা যাওয়া গাছগুলো এখন তার ঘরের উপর ভেঙে পড়ার শঙ্কা করছেন।
একই কথা জানালেন গিরিফুল এলাকার বাসিন্দা বাধবী চাকমাও।
এদিকে খাগড়াছড়ি আলুটিলা সড়কের ৯টি সৌন্দর্যবর্ধনকারী ‘জাকারান্ডা’ গাছও কেটে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নিসর্গপ্রেমী সাথোয়াই মারমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য জাকারান্ডা গাছ লাগানো হয়েছে। ২১ জানুয়ারি আলুটিলায় এলাকায় সেসব গাছ কেটে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকেরা।”
ছাল তুলে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানিয়েছে খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী । তিনি বলেন, “গাছের ডালপালা যাতে বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে না যায় সেজন্য ডালপালা কাটার বিধান রয়েছে। সেজন্য তাদের অর্থ বরাদ্দও রয়েছে।
“কিন্তু ডালপালা না কেটে এভাবে ছাল তুলে বৃক্ষ হত্যা খুবই গর্হিত অপরাধ। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হাওয়া উচিত।”
এদিকে গাছের ডালপালা কাটার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করে না বলে অভিযোগ সওজের।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, “সাধারণত সড়কের দুই পাশে গাছের মালিকানা আমাদের; এখানে গাছের ডালপালা কাটতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ গাছ কাটার সময় কখনোই আমাদের সঙ্গে (সড়ক বিভাগ) যোগাযোগ করে না এবং অফিসিয়ালি কোনো চিঠিও দেয় না।”
গাছের ছাল তুলে ফেলার বিষয়টি জানতেন না জানিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, “গাছের ছাল তুলে গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। এই ঘটনায় আমাদের গাছ কাটার কোনো শ্রমিক জড়িত থাকে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
“এ ছাড়া জাকারান্ডা কাটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিককে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, এখন থেকে গাছের ডাল কাটার বিষয়টি সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।