২২ জেলার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি হরতালের চিত্র তুলে ধরে খবর পাঠিয়েছেন।
Published : 29 Oct 2023, 07:22 PM
পিটিয়ে 'হত্যা', বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যদিয়ে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে এ হরতাল শুরু হলেও আগের রাতে রাজধানী ও ঢাকার আশপাশের কয়েক জেলায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়।
পাশাপাশি হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের পুলিশ আটক ও গ্রেপ্তার করে।
এই অবস্থার মধ্যেই সকালে সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি শুরু হলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে তেমন একটা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। অপরদিকে এই হরতালের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ সারাদেশে মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করে। এতে কোথাও কোথাও দুই দলের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এর মধ্যে লালমনিরহাটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আর বেশ কয়েক জায়গায় বিএনপির পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রাণঘাতী সংঘাতের পর মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এরপর রোববার সারাদেশে হরতালের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
ওই দিনই নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জামায়াতেও দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়।
হরতালকে কেন্দ্র করে সারাদেশে রাস্তায় অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের হরতালের চিত্র তুলে ধরে পাঠানো খবর-
লালমনিরহাট: বিএনপির ডাকা হরতালে লালমনিরহাটে সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৪৮ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর হোসেন সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মহেন্দ্রনগর বাফার গোডাউন লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি বেড়পাঙ্গা এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও এক নেতা ও একজন কর্মী। চিকিৎসার জন্য তাদের একজনকে ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুক একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল: বরিশালে হরতালের কোনো প্রভাব নেই। সকাল থেকে হরতালের পক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন কিংবা পিকেটিং হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাস-লঞ্চ স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। তবে লোকজনের চলাচল একটু কম ছিল।
বরিশাল নৌবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। জেলার বাইরের যাওয়া লঞ্চও চলাচল করেছে।
বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, অভ্যন্তরীণ লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ রাতে ছাড়বে।
স্বাভাবিক দিনের থেকে যাত্রী কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন বরিশাল থেকে ভোলাগামী সোহাগী-১ লঞ্চের মাস্টার নয়ন বলেন, দূরপাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় যাত্রীর সংখ্যা কম হয়েছে।
নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে। যাত্রী কম থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের বাস কিছুটা বিলম্বে এবং কমিয়ে চলাচল করছে।
অভ্যন্তরীণ রুটের কাউন্টার স্টাফরা জানিয়েছেন, যাত্রী কম থাকায় বাস ছাড়তে একটু দেরি হয়েছে।
এ ছাড়া স্বাভাবিক নিয়মে সকাল থেকে বিআরটিসির বাসগুলো সকল রুটে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে, যাতে যাত্রীদের উপস্থিতিও ছিল বেশ ভালো।
নগরী ও উপজেলা সদরগুলোতে সিএনজি, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশাসহ সব ধরনের থ্রি-হুইলার স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করছে। এমনকি বরিশাল নগরী থেকে উপজেলাগুলোতে যাত্রী পরিবহন করছে এসব যানবাহন।
নগরীর দোকানপাট খুলেছে। স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, অফিস-আদালত যথানিয়মে শুরু হয়েছে।
হরতাল উপলক্ষে নগরে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়ক ধরে র্যাব-পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রি জানান, সকাল থেকে এ পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে, আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও অব্যাহত নজরদারি রয়েছে।
কাউনিয়া থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, হরতালের কোনো প্রভাব নেই। জনজীবন স্বাভাবিক। হরতালের পক্ষে কোনো কর্মকাণ্ড হয়নি।
এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটের বাসসহ যানবাহন চলাচল করছে। মহাসড়কের কোথাও হরতালের পক্ষে কর্মকাণ্ড করেছে এমন কোনো খবর পাননি।
বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল জানান, তার থানা এলাকায় সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।
বেনাপোল: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বেনাপোল বন্দরে। হরতালের সপক্ষে মাঠে কাউকে দেখা না গেলেও বিপক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক ছিল। বেনাপোল বন্দরে পণ্য উঠানামা, খালাস ও শুল্কভবনের শুল্কায়নের কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে তবে সন্ধ্যার আগে কোনো পণ্য বোঝায় ট্রাক বন্দর ছাড়েনি।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান জানান, হরতালের কারণে বন্দরে কোনো প্রভাব পড়েনি। আমদানি-রপ্তানি ও শুল্ক ভবনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
আজিজ খান বলেন, “রোববার সকাল থেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক গেছে। ভারত থেকেও বেনাপোল বন্দরে এসেছে পণ্যবাহী ট্রাক। তাই রোববার সকাল থেকে হরতাল হলেও সব কাজ পুরোদমে চলছে।”
শার্শা থানার ওসি এস এম আকিকুল ইসলাম জানান, হরতালকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
বগুড়া: হরতালকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের গালাপট্টি সড়কে এ সংঘর্ষ হয়৷ এ সময় ৪/৫টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে উভয় পক্ষ তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ের দিকে ফিরে যায়।
এদিকে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র সংঘর্ষের ঘটনায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েলসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন।
রোববার সকাল থেকেই হরতাল সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনের জড়ো হয়ে হরতাল সমর্থনে সমাবেশ করেন।
অপরদিকে, হরতালের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করে।
একপর্যায়ে মিছিল নিয়ে বিএনপি কর্মীরা গালাপট্টির সড়কে শহর কমিটির কার্যালয়ে যায়। তখন আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের ধাওয়া করে এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণে উভয় পক্ষের ১৩ জন আহত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, শান্তিপূর্ণ হরতালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর প্রথমে হামলা চালিয়েছে। পরে আমি গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসি। আমাদেরও পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের গালাপট্টি এলাকায় শহর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মন, আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ, ছাত্রলীগ নেতা নাইমসহ আটজন আহত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের চারমাথা এবং বাঘোপাড়া এলাকায় বেসরকারি সংস্থা টিএমএমএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী পরিবহনের দুটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে হরতালকারীরা। এ সময় শিশুসহ ছয়জন রোগী আহত হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া কর্মকর্তা রায়হান তালুকদার।
বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক সদস্যও আহত হয়েছেন।
তবে হরতাল চলাকালে শহরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন উপজেলায় অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা: হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি চুয়াডাঙ্গায়। সকাল থেকেই জেলার অভ্যন্তরে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করেছে। সকাল ১০টার পর থেকেই বেশিরভাগ দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট ছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে। দলবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরের রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন।
শহরে হরতাল সমর্থকদের পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। শহরের পৃথক তিনটি স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালবিরোধী মিছিলে গিয়ে কুমিল্লা নগরীতে সংঘর্ষে জড়িয়েছে যুবলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর চকবাজার এলাকার কাশারিপট্টি মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহতরা হলেন- কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের সদস্য রোকন উদ্দিন রোকনের কর্মী মাসুম আহমেদ (৩০) ও ড্যানি (৩২)।
দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মহানগর যুবলীগ সদস্য রোকন উদ্দিন রোকনের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি চকবাজার কাশারিপট্টি এলাকায় এলে মোবাইল ফোনে দৃশ্য ধারণ করেন স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক আওয়ামী লীগের কর্মী। এ সময় জামায়াত-শিবির সন্দেহে ওই আওয়ামী লীগ কর্মীর হাত থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন রোকন উদ্দিনের কর্মীরা। পরে তাকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়।
এক পর্যায়ে বিষয়টি জানতে পেরে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর যুবলীগ নেতা আমিনুল ইকরামের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কাশারিপট্টি এলাকায় এলে উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে রোকন উদ্দিন রোকন গ্রুপের দুই কর্মী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
এ ঘটনায় দুপক্ষের নেতারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
হবিগঞ্জ: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে হবিগঞ্জে রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে এবং গাছ ফেলে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল-যুবদলসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। যুবলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
রোববার সকাল থেকে হরতালের কারণে জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে হবিগঞ্জ শহরে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
যশোর: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল যশোরে আংশিক পালিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে কোথাও কোনো পিকেটিং চোখে পড়েনি। কোথাও কোথাও বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। সকাল ৭টার দিকে শহরের সদর হাসপাতাল মোড়ে হরতালের পক্ষের একটি মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় মিছিলকারীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ।
শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত পুলিশ ৫০ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে জানান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সকাল থেকে যানবাহন চলাচল কম থাকলেও সকাল ১০টার পর থেকে অভ্যন্তরীণ যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করে। দূরপাল্লার যানবাহনও তেমন চলাচল করেনি। দেরিতে দোকান খুলতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের। অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় অফিস আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে সংখ্যায় ছিল কম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন বলেন, হরতালে কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
কুড়িগ্রাম: বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী হরতালের প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি হরতালবিরোধী মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
বক্তারা, পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
মাগুরা: মাগুরা শহরের ভায়না মোড় এলাকায় রোববার দুপুর ২টার দিকে মাগুরা থেকে ঝিনাইদহমুখী এসবি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে হরতালকারী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ সময় একাধিক অটোরিকশায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এসব ঘটনার সময় বাস থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে কয়েকজন যাত্রী সামান্য আহত হন। এ সময় হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনার সময় হামলাকারীরা সেখানে বেশ কিছু হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনার কিছুক্ষণ পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বাসের আগুন নেভায়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে এসে বিক্ষোভ মিছিল করে। তার আগে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যশোর থেকে ফরিদপুরগামী একটি বাসে হামলা চালায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে সেখানে কেউ আহত হননি। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি বাদে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জ-ঝিটকা-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের বাঠইমুড়ি এলাকায় সিএনজিতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হরিরামপুর থানা ওসি সুমন কুমার আদিত্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ঝিটকা-হরিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের বাঠইমুড়ি এলাকায় সিএনজিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস হরিরামপুর ইউনিট আগুন নিভিয়েছে।
হরিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে এসে আগুন নেভানো হয়েছে। সিএনজির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ মাহমুদ, হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান, হরিরামপুরের এসি ল্যান্ড তাপসী রাবেয়া, হরিরামপুর থানা ওসি সুমন কুমার আদিত্য, ঘিওরের নালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে বিএনপির ডাকা হরতালে মাঠে নেই সমর্থকরা। তবে মাঠে সরব রয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল থেকে দূরপাল্লার গাড়ি কিছুটা কম চলাচল করলেও অভ্যন্তরীণ সড়কে সব ধরনের গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার রাতে জেলার কুলাউড়া উপজেলার ছকাপন এলাকায় সুরমা মেইল ট্রেন অতিক্রম করার সময় রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে পালিয়ে যায় পিকেটাররা। এ সময় ট্রেনটি থামিয়ে রেললাইন থেকে জ্বলন্ত টায়ার সরিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করেন ওই ট্রেনের কর্মীরা।
মৌলভীবাজার পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, মৌলভীবাজারের অভ্যন্তরীণ সড়কে যথা নিয়মেই বাস চলাচল করছে।
এ ছাড়া মৌলভীবাজার চৌমুহনী ও শ্রীমঙ্গল চৌমুহনীতে শান্তি সমাবেশের জন্য অবস্থান নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ময়মনসিংহ: হরতালে ময়মনসিংহের জনজীবনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দূরপাল্লার যান চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে নগরজুড়ে রিকশা, অটোরিকশার চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
রোবাবার দুপুরে নগরীর মাসকান্দা, শম্ভুগঞ্জ মোড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় ও চরপাড়া এলাকা ঘুরে হরতালের মাঠে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা বা উপস্থিতি দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, হরতালের প্রভাবে যাত্রীশূন্য নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনাল। ফলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল নেই বললেই চলে। সেইসঙ্গে নগরীর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ছিল বন্ধ।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, সর্বত্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পয়েন্টগুলোতে পুলিশের টহল ও সতর্ক অবস্থান আছে।
নওগাঁয়: কোনো প্রকার পিকেটিং ও হরতালের পক্ষে স্থানীয়ভাবে প্রচার ছাড়াই নওগাঁয় শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। তবে হরতালের বিপক্ষে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকদের শহরে মিছিল করতে দেখা গেছে।
সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। তবে শহরে রিকশাভ্যান, অটোরিকশা চলাচল করছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে তুলনামূলক উপস্থিতি কম ছিল।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হরতালের সমর্থনে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির৷
রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ এতে প্রায় ঘণ্টাখানেক এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল৷
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, হরতালের সমর্থনে সকালে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে মিছিল থেকে মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা৷ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে৷ পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল মারতে শুরু করলে শর্টগানের গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ৷
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মাদের দাবি, “পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আমাদের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন৷”
হরতালের সমর্থনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলের শুরুতে পুলিশ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম আজাদ৷
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম বলেন, হরতালের সমর্থনে জনভোগান্তি সৃষ্টি করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ পরে তারা ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়৷
এদিকে বিকেলে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷
এর আগে সকালে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে বিএনপি৷ পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়৷
পাবনা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পাবনায় ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। পাবনা থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আঞ্চলিক সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট যানবাহন চলাচল করছে। দূরপাল্লার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এ ছাড়া জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত পাবনার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মাঠে দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের। শহর ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে সারাদেশে বিএনপির ডাক দেওয়া হরতাল ও সহিংসতার প্রতিবাদে পাবনায় বিক্ষোভ মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘায় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের পুলিশ সদস্যের একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়া হয়েছে।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে কেউ হতাহত না হলেও গাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম জানান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্য মো. রিপন আলী ছুটিতে পরিবারে সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে প্রাইভেটকারে করে বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া এলাকায় পৌঁছলে গাড়ির গতিরোধ করে প্রাইভেটকার থেকে সবাইকে নামিয়ে দেন হরতাল সমর্থকরা। পরে তারা প্রাইভেটকারটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান। তবে তার আগেই গাড়িটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়।
সাভার: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে সাভারে মহাসড়কে কিছু যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হঠাৎ লাঠিসোঁটা হাতে মোটরসাইকেল শোডাউনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যানবাহন চালকরা।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়ার সব সড়কেই মোটরসাইকেল শোডাউন দিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
হরতাল চলাকালে সড়কে কিছু গণপরিবহন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দেখা গেলেও মোটরসাইকেল মহড়ায় আতঙ্কিত হয়ে মুহূর্তেই সড়ক ফাঁকা হয়ে যায়।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবুল হাসান বলেন, “সাভারের মহাসড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।”
সিরাজগঞ্জ: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে সিরাজগঞ্জ শহরে কোনো প্রভাব পড়েনি। কিন্তু দূরপাল্লার যানবাহনের অভাবে ফাঁকা অবস্থায় ছিল মহাসড়ক। হরতালের বিপক্ষে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিছিল-সমাবেশ ও রাস্তায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে হরতালের পক্ষে বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।
সকালের দিকে শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলতে শুরু করে।
সিরাজগঞ্জের টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। এ কারণে কর্মজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক মানুষজনকে মহাসড়কের পাশে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, মহাসড়কে অল্পসংখ্যক বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে। মহাসড়ক অনেকটা ফাঁকা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মহাসড়কের নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছে।
টাঙ্গাইল: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কারণে পরিবহণশূন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা পরিবহন চলাচল। মহাসড়কের কোথায় কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে জেলা শহর থেকে দূরপাল্লাসহ আন্তঃজেলার কোনো বাস চলাচল করেনি। টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা বাসগুলোও বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থানে পার্কিং করে রেখেছে চালকরা।
অন্যদিকে, ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রেল স্টেশনের মাস্টার (বুকিং) রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, অন্য দিনের মতই ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ট্রেনের কোনো শিডিউল পরিবর্তন হয়নি।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল না করলেও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে হরতালের সমর্থন এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মিছিল বের করলে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং বিএনপির এক কর্মীকে আটক করে। এ ঘটনায় তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভোরে ঠাকুরগাঁও শহরের পূর্ব গোয়ালপাড়ার পল্লী বিদ্যুতের সামনের মহাসড়কে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ উপস্থিত হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটনায়।
এতে পুলিশের এএসআই রুবেল, সুমন ও কনস্টেবল সামাল আহত হন বলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মো. ফিরোজ কবির দাবি করেন।
পরে আরও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এসব ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি ফিরোজ কবির।
নেত্রকোণায়: দেশব্যাপী ডাকা বিএনপি ও জামায়াতের হরতালে নেত্রকোণার জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়েনি। হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের কোথাও পিকেটিং করার খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল থেকে শহরসহ জেলার সব স্থানের সবকিছুই ছিল অন্য দিনের মত স্বাভাবিক। স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরও খোলা ছিল। ভোরের দিকে শহরের পারলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস না ছেড়ে গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানচলাচল শুরু হয়।
এদিকে, নেত্রকোণায় জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের ছোট বাজারের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারো দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।