“অবৈধ কালভার্ট নির্মাণের কারণে বাঁধের গোপালকাঠি অংশে মঙ্গলবার রাতে ভেঙে যায়। পরে কালভার্টটি অপসারণ করা হয়েছে”, বলেন পাউবোর প্রকৌশলী।
Published : 28 Jul 2023, 07:47 PM
বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাজিরপুর-গোপালপুর বেড়িবাঁধের পাশ থেকে একটি ইটভাটার জন্য মাটি উত্তোলন করায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং স্লুইচ গেইট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একইসঙ্গে সরকারি খাসজমি অবৈধভাবে দখল করে ইটভাটাটির পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বাঁধের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে এমবিএ নামের ওই ভাটার মালিককে চিঠি দেওয়া হবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের জমিতে স্থাপনা তৈরি এবং মাটি দূরের পতিত জমি থেকে কিনে এনে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করেছেন ইটভাটা মালিক।
পাউবোর মালিকানাধীন এই বেড়িবাঁধটি বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নে ভৈরব নদের তীরে। বাঁধটির তিন কিলোমিটার গত অর্থ বছরে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু মেরামতের তিন মাসের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে বাঁধের গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকার একটি অংশ ভেঙে পড়ে। এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এই বেড়িবাঁধ বিষ্ণুপুর ও গোটাপাড়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক পথ।
তিনি অভিযোগ করেন, বাঁধের পাশ দিয়ে এক্সক্যাভেটর দিয়ে ইটভাটা মালিক মাটি কেটে ইট তৈরি করেন। বেড়িবাঁধ কেটে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করেছিলেন। যে কারণে বাঁধটি ভেঙে যায়।
এ ছাড়া তিনি কেশবপুর খাল লাগোয়া জেগে ওঠা চরে সরকারি খাস জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং খালের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন।
সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয় গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ, পিন্টু সিকদার ও সুজন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ভাটা মালিকের এক্সক্যাভেটর (ভেকু) দিয়ে নিয়মিত মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার কারণে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচ গেইটটি চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এখনই এটা বন্ধ করা না হলে বড় ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এমবিএ ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনি বলেন, “দুই দশক আগে এই ইটভাটা নির্মাণ করি। এই ভাটাটি ১৪ বিঘা জমির ওপর নির্মিত। সব জমির মালিক আমি নিজে। সম্প্রতি খালের পাশে যে স্থাপনা তৈরি করেছি তার মধ্যে সামান্য কিছু সরকারি জমি থাকতে পারে।
“এ ছাড়া আমি ভাটার পাশ থেকে কোনো মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করি না, দূরের পতিত জমি থেকে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করে থাকি।”
এ বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, “স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইটভাটা মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে বড় একটি জনগোষ্ঠীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”
এই সমস্যার সমাধান করতে জড়িত ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান এই জনপ্রতিনিধি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থ বছরে ভৈরর নদের তীরে তৈরি নাজিরপুর-গোপালপুর বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটার ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়।
“বাঁধের গোপালকাঠি অংশে একটি অবৈধ কালভার্ট নির্মাণের কারণে মঙ্গলবার রাতে ভেঙে যায়। বুধবার অবৈধ কালভার্টটি অপসারণ করে ফেলা হয়েছে। এই বাঁধের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে ভাটা মালিককে চিঠি দেওয়া হবে।”
এ ছাড়া ভাটা মালিক অবৈধভাবে বাঁধের পাশের খাল থেকে মাটি উত্তোলন করায় বাঁধ ও একটি স্লুইচ গেইট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাটা মালিককে খাল থেকে মাটি না কাটতে সতর্ক করেছে বলে জানান তিনি।
অবৈধ জমি দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে জমির পরিমাণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহম্মদ সাইফুল্লাহ দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের এমবিএ ইটভাটার বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখল এবং রেকর্ডীয় খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের যে অভিযোগ রয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
“আগামী সপ্তাহে ম্যাপ নিয়ে আমিন দিয়ে জমির পরিমাণ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”, বলেন উপজেলার ইউএনও।