ফরিদপুরের বাখুন্ডা এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাতজন।
Published : 08 Apr 2025, 07:40 PM
“আমার আব্বাও নাই, ভাইও নাই, মার অবস্থায়ও ভাল না। কাকা, ওরা মারা গেছে। আমি হাসপাতালে আছি, আমি এহন কী করব?”
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সিঁড়িতে বসে এভাবে মোবাইল ফোনে স্বজনকে বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছিলেন মো. সাহেদ সরদার। তার মা একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সদর উপজেলার বাখুন্ডা এলাকায় ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাতজন। এতে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।
তাদের মধ্যে সাহেদ সরদারের বাবা জোয়ার সরদার (৬৫) ও ছোট ভাই ইমান সরদার (৩৫) রয়েছেন। তার বৃদ্ধ মা পারুলী বেগম আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। তারা নগরকান্দা উপজেলার শেয়ারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
সাহেদ সরকারের পরিবারের সদস্যরা জানান, জোয়ার সরদার, ইমান সরকার ও পারুলী বেগম অসুস্থ এক স্বজনকে দেখতে হাসপাতালে আসছিলেন। তাদের সঙ্গে রোগীর জন্য রান্না করা খাবারও ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে তারাই এখন হাসপাতালের মর্গে লাশ হয়ে আছেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন বড় ছেলে সাহেদ সরদার। এসেই তিনি বাবা ও ভাইয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি মোবাইল ফোনে স্বজনদের বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানাচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
ফরিদপুরে বাস দুর্ঘটনা: ওভারটেক করতে গিয়ে ৭ জনের প্রাণহানি
ফরিদপুরে বাস খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৭
এ সময় সাংবাদিকরা কাছে এগিয়ে গেলে তাদের কাছে বেপরোয়া লোকাল বাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বলেন, “মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের রাস্তায় ড্রাইভারদের কারণে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। কিছু ড্রাইভার লাইসেন্স ছাড়া, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালায়। এদের দেখভালের কেউ নেই। সেই কারণে আমার মা-ভাইয়ের প্রাণ গেছে। এরা তো বাসে উঠে কোনো পাপ করে নাই।”
সাহেদ সরদার বলেন, “এই ড্রাইভারদের ভুলের কারণে অলরেডি আমার দুজন মারা গেছে, আমার মা মৃত্যুর মুখে। আজ যদি ড্রাইভাররা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালাত, তাহলে আমার বাবা ও ভাই মারা যেত না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ফারাবি এন্টারপ্রাইজ নামে লোকাল বাসটি বাখুন্ডা এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপর সেটি সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টে পড়ে যায়। তাতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লাসহ প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা।
এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, এ দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, এ ছাড়া নিহত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে বিআরটিএর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।