শিক্ষকের স্ত্রী বলেন, “স্কুলটিতে জামায়াতের ঘাঁটি করতে দিইনি বলেই ওরা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য আমার স্বামীর নামে মামলা দিয়েছে।“
Published : 22 Feb 2023, 10:05 PM
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে পরিবার বলছে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে।
বুধবার ভোরে উপজেলার কয়া গ্রামের বাড়ি থেকে কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোহসীন হোসাইন জানান।
এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে মো. এনামুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সহ-সভাপতি।
পুলিশ পরিদর্শক বলেন, “স্কুলে শিক্ষার্থীদের বোরখা পড়তে নিষেধ করাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৫৯৫ ক/৫০৫ ধারার মামলায় শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বুধবার আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।”
কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় দীর্ঘদিন পর সরকারের এমপিওভুক্ত হয়। শুরু থেকেই এই স্কুলে আছেন আবু সালেহ। তিনি এলাকায় বাউল গানের শিল্পী হিসেবেও পরিচিত। তিনি কয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে।
একই কম্পাউন্ডে কয়া কিন্ডারগার্টেনও রয়েছে। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে আছেন আবু সালেহর স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন লিলি।
মামলার বাদী এনামুল হক বলেন, প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের স্কুলে বোরখা পরে আসতে নিষেধ করেন। মাথায় ক্যাপ পরে, জুতা পরে সাইকেলে স্কুলে আসতে উদ্বুদ্ধ করেন।
সোমবার তিনজন অভিভাবক স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। তখন আবু সালেহ মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেন এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলেন বলে অভিযোগ করেন এনামূল।
তিনি আরও বলেন, “একজন মুসলিম হিসেবে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে; তাই আমি মামলা করেছি।”
তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আবু সালেহর স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন লিলি বলেন, “কয়েকদিন আগে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নারী সদস্য আমার কাছে এসে তাদের সংগঠনে নাম লেখাতে বলেন। তারা সংগঠনের সদস্য ফরমও দিয়ে যান।
“সোমবার তারা এসে বলেন, স্কুলে ইসলাম সম্পর্কে প্রচারের জন্য মহিলাদের নিয়ে মাহফিল করবেন। তার জন্য জায়গা দিতে হবে। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। এ কারণেই তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।”
নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, “স্কুলটিতে জামায়াতের ঘাঁটি করতে দিইনি বলেই ওরা আমাকে শায়েস্তা করার জন্য আমার স্বামীর নামে মামলা দিয়েছে। ওরা এমনটি করবে তা আগে জানলে আমি এসব ঝামেলার মধ্যেই যেতাম না। ওদের দাবি মেনে নিলে আজকে হয়ত এই হয়রানিতে পড়তাম না।”
স্বামীর মুক্তি দাবি করেন নিলুফার ইয়াসমিন।
উপজেলার ১ নম্বর কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, “সোমবার স্কুলে কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের তর্ক-বিতর্ক হয়েছে এবং লোকজন জড়ো হয়েছে। আমি জানতে পেরে স্কুলে যাই। সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করি। পরে পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
কয়া চাইল্ড হ্যাভেন নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, “প্রায় দুই দশক ধরে বিনা পয়সায় বেগার খাটার পর গত জানুয়ারিতে স্কুলটি এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এরপর থেকেই এই স্কুলটিতে দখলবাজি করতে একটি চক্র নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
“প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আজগুবি একটা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছে। আমার বিশ্বাস, আদালত থেকে শিক্ষক আবু সালেহ ন্যায় বিচার পাবেন।”
কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালেই আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমি নিজে সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি।
“তারা বলেছেন, গ্রেপ্তার শিক্ষকের স্ত্রী স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন লিলিকে মহিলা জামায়াতের সদস্য করার জন্য কয়েকজন মহিলা ফরম দিয়ে আসেন। সেটি পূরণ করতে এবং ওই স্কুলে মহিলা জামায়াতের মাহফিল করতে চাপ দেন। তিনি রাজি না হওয়ায় স্পর্শকাতর বিষয়ে মামলা দিয়ে শায়েস্তা করতে চেয়েছে।”
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যুবলীগ নেতা জিয়াউল শিক্ষক আবু সালেহর মুক্তি দাবি করেন।