মামলায় মোট ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 26 Mar 2023, 10:44 PM
খুলনার দিঘলিয়ায় একটি হত্যা মামলার আসামিকে খুনের ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
খানজাহান আলী থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, নিহতের ছেলে শেখ তানভীর বাদী হয়ে শনিবার গভীর রাতে মামলাটি করেন।
মামলায় উপজেলার বারাকপুর ইউপির চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে প্রধান আসামি করা হয়।
এতে মোট ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত শেখ আনসার উদ্দিন একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি পাভেলের চাচা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
ওসি কামাল জানান, মামলার এজাহারভুক্ত দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার এবং সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওসি কামাল আরও জানান, শুক্রবার আনসার উদ্দিন খানজাহান আলী থানা এলাকার শিরোমণি পূর্বপাড়ার বায়তুল মামুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে তার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। বেলা সোয়া ২টার দিকে মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত আনসারকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ আনসার উদ্দিনকে পাশের পরিত্যক্ত একটি টিনের ঘর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আনসার উদ্দিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন বিকালেই দিঘলিয়ার লখোহাটি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে আনসার উদ্দিনের একমাত্র ছেলে ও মামলার বাদী শেখ তানভীর বলেন, “স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।”
সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে তার ভাষ্য।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে শেখ আনসার উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় রাজনীতি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, দিঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটির প্রভাবশালী ‘চারবাড়ি’ পরিবারের সন্তান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনসার উদ্দিন। তবে দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন বারাকপুর গ্রামে।
চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বারাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদও পান। এরপর প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী জাকির হোসেনের পরিবারের সঙ্গে। বাজার কমিটির নির্বাচন, ইউপি নির্বাচন সব দ্বন্দ্বেই উঠে আসে তার নাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ আনসার। ওই বছরই করোনাকালীন চাল দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনকে লাঞ্ছিত করেন আনসারের লোকজন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই বছর চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে স্থানীয় নারীরা মানববন্ধন করেন। এসবের পেছনে আনসার উদ্দিনের হাত আছে বলে গাজী জাকিরের স্বজনরা অভিযোগ তোলেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বারাকপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শেখ আনসার উদ্দিন। যদিও অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী জাকিরের কাছে পরাজিত হন।
ভোটের আগে প্রচারণার সময় দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় সংঘর্ষ বাঁধে।ভোটের দিন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন।
এরপর ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন।
একই বছরের নভেম্বরে ওই ইউপিতে উপ-নির্বাচনে শেখ আনসার উদ্দিন আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তবে ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে, জাকির হত্যায় আনসার উদ্দিন সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলে তাকে মামলার আসামি করা হয়।
আনসার উদ্দিনের ছেলে শেখ তানভীর বলেন, “বাইরে বাবার কোনো শত্রু ছিল না। বারাকপুর বাজার কমিটির নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেকারণেই এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
তানভীর আরও বলেন, “আমাদের বারাকপুর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা ছিল। গাজী জাকির হোসেনের পরিবারের লোকজন আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে; বাড়িতে বোমা মেরেছে। নির্বাচনের সময় আমাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে।
“জাকির হত্যা মামলায় বাবাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের বাড়ি ছাড়া করেছে। পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
দিঘলিয়া থানার ওসি রিপন কুমার সরকার বলেন, “চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন হত্যাসহ শেখ আনসার উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে।”
ওসি রিপন আরও বলেন, মামলাগুলো মূলতঃ ২০২০ সালের পরই হয়েছে। সব কটি মামলা মোটামুটি গাজী জাকির হোসেন ও তার স্বজন বা সমর্থকদের করা। এগুলোতে জামিনে ছিলেন শেখ আনসার উদ্দিন।”
আরও পড়ুন: