গত মঙ্গলবার একটি কমিউনিটি সেন্টারে হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।
Published : 05 Jul 2023, 10:42 PM
গাঁটছড়া বাঁধলেন বাংলাদেশ জাতীয় আর্চারি দলের সফল জুটি রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী।
বুধবার দুপুরে নীলফামারী শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাদের বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অর্ধশত অতিথি নিয়ে শহরের ‘আশা কমিউনিটি সেন্টার’ এ বর বেশে প্রবেশ করেন রোমান সানা।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার মা বিউটি বেগম, বড়ভাই বিপ্লব সানা, বোন লুবনা আক্তার, চাচা রোকন সানা।
একই সময় সেখানে উপস্থিত হন আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল, ট্রেজারার আনিসুর রহমান দিপু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রশিদুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সহসাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম কিরণ, আর্চারি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং সাব কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক ঢালী, প্রধান কোচ মিস্টার মার্টিন ফেডারিক।
কমিউনিটি সেন্টারের মূল ফটকে বরযাত্রী ও অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান নীলফামারী পৌরসভা মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, কনের বাবা নূর আলম সিদ্দিকী, মা শাহানাজ বেগম, মামা আনজারুল ইসলাম জুয়েল।
বর বরণ শেষে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে সম্পন্ন হয় কাবিনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মুসলিম রীতিতে বিয়ে পড়ান জেলা শহরের নীলকুঞ্জ আবাসিক এলাকার শাহী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
এ সময় বর-কনে তিনবার কবুল বলে নিহাকহ রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে মাঠের জুটি থেকে তারা প্রবেশ করেন দাম্পত্য জীবনে।
গত মঙ্গলবার একই কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।
দিয়াদের বাসা নীলফামারী পৌর শহরের নীলকুঞ্জ আবাসিক এলাকায়। এ শহরেই তার বেড়ে ওঠা।
দিয়ার বাবা নূর আলম সিদ্দিকী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত। মা শাহানাজ বেগম গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দিয়া সবার বড়।
অপরদিকে, রোমান সানার বাড়ি খুলনার রূপসায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট রোমান বর্তমানে আনসারে ল্যান্সনায়েক পদে কর্মরত। বিকেএসপির পাট চুকিয়ে এ বছর দিয়াও আনসারে যোগ দিয়েছেন।
পছন্দের পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে খুশি দিয়ার বাবা-মা। নববিবাহিতদের সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া চাইলেন দেশবাসীর কাছে।
এ সময় তারা বলেন, কয়েক মাস ধরেই এ ব্যাপারে দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল; অবশেষে তা চূড়ান্ত হল।
এদিকে, নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে দিয়া সিদ্দিকী বলেন, “বিয়ে করলে বরকত বাড়ে। আমরা দুজন একসঙ্গে দেশের প্রতিনিধিত্ব করব। আল্লাহ যদি চান, আমাদের হাত দিয়ে অলিম্পিকে গোল্ড আসবে।”
একই কথা বললেন রোমান সানাও।
তিন বলেন, “খেলায় দিয়ার ডেডিকেশন সব সময় আমার চেয়ে বেশি থাকে। ও সব সময় বেশি সাপোর্ট দিয়েছে আমাকে।”
আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব আহমেদ চপল বলেন, “আমরা যারা অভিভাবক আছি, আমাদের সবার কামনা, তারা স্বচ্ছন্দে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করুক। তাছাড়া ক্রীড়ঙ্গনে তারা যেন স্বাধীনভাবে খেলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, ‘আর্চারি একটা নতুন খেলা, বয়সের তুলনায় আমাদের অর্জন বেশি। এটা কিন্তু ক্রমান্বয়ে সানা-দিয়ার জন্যই হয়েছে। সামনে অলিম্পিক কোয়ালিফিকেশন আছে। আমরা সবার পক্ষ থেকে দোয়া করবো, তারা যেন সুখি দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি খেলায় আরও বেশি মনোনিবেশ করেন। তাহলে স্বপ্ন সফল হবে।”
১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসে খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো ইভেন্টেই বাংলাদেশ বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারেনি। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশ আর্চারি দল বাছাইপর্ব পেরিয়ে খেলেছে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টের চূড়ান্ত পর্বে। এই ইভেন্টে রোমান সানার সঙ্গী ছিলেন দিয়া সিদ্দিকী। বাছাই পেরিয়ে মেয়েদের এককের প্রথম রাউন্ডেও খেলেন দিয়া।
অলিম্পিকের আগে ২০২১ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডে বিশ্বকাপ আর্চারির স্টেজ টুতে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রুপা জেতে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে কালেভদ্রে ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশের জন্য এই অর্জন ছিল দিয়ার সৌজন্যেই। এরপর ঢাকায় এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার পদক জিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। সেই দলেও ছিলেন দিয়া।