১৯৭১ সালের ৬ জুলাই ঝিনাইগাতীল রাঙ্গামাটিয়া-খাটুয়াপাড়া গ্রামে সম্মুখযুদ্ধে নাজমুল আহসান শহীদ হন।
Published : 27 Dec 2022, 08:55 PM
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কাটাখালীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসানের ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়েছে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে মঙ্গলবার শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার এটি উন্মোচন করেন।
১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে এখানকার রাঙ্গামাটিয়া-খাটুয়াপাড়া গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল আহসান শহীদ হন।
সেদিনের সেই ভয়াবহ যুদ্ধের বিবরণ দেন আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদদের সাবেক কমান্ডার আসম নুরুল ইসলাম হিরো।
১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে ‘অপারেশন কাটাখালি' পরিচালনা করে সফলভাবে কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করে ফেরার পথে সকাল হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটিয়া-খাটুয়াপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
ওই গ্রামের পাক হানাদার বাহিনীর দোসর, দালাল, রাজাকার ও আলবদররা পাকবাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়। সংবাদ পেয়ে তিনদিক থেকে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে হানাদার বাহিনী। এরপর শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ।
সেই সম্মুখ সমরে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী অপারেশন কমান্ডার নাজমূল আহসান এবং তার পরিবারের অপর দুই মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন শহীদ হন।
এরপর পাক হানাদার বাহিনী রাঙ্গামাটি-খাটুয়াপাড়া গ্রামে হানা দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে ছয় গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে পুরোনো সেতুটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেতুটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে শেরপুর সড়ক বিভাগ। সেইসঙ্গে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ। পাশাপাশি কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনে স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখতে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হিরো আরও জানান, শেরপুর-ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কাটাখালী ব্রিজটি পাড়ি দিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদনগরে পাকহানাদার বাহিনীর হেডকোয়ার্টারে যেতে হতো। এ ছাড়া কোয়ারি রোড, রাংটিয়া পাতার মোড়, নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাও ও নালিতাবাড়ী এবং ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার অনেকগুলো ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থার একমাত্র পথ ছিল এটি।
কাটাখালী ব্রিজটি ধ্বংস করতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি অভিযান ব্যর্থ হয় উল্লেখ করে হিরো বলেন, অবশেষে ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানি কমান্ডার নাজমূলের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট দিয়ে কাটাখালি ব্রিজটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। এর ফলে পাক হানাদার বাহিনীর হেডকোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পসহ ভারতের মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় অনেকগুলো ক্যাম্পের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া রাঙ্গামাটিয়া-খাটুয়াপাড়া গ্রামের তিনজন নারীকে [বীরাঙ্গনা] সরকার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে।
ম্যুরাল উন্মোচন অনুষ্ঠানে কমান্ডার আসম নুরুল ইসলাম হিরো ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মুকতাদিরুল আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমান আকন্দ, ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আল মাসুদ বক্তব্য রাখেন।