নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছি কারা এ ঘটনায় জড়িত।”
Published : 08 May 2024, 02:47 PM
নরসিংদী সদর উপজেলায় ভোটকেন্দ্র দখল করাকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়ন পরিষদের কাকশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান।
সংঘর্ষের কারণে ওই কেন্দ্রে প্রায় ৪০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আনোয়ার হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল বাকির অনুসারীদের এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত দশজন আহত হন।
তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের সবার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, “দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত, ভোট নেওয়া আবার শুরু হয়েছে।"
নরসিংদী সদরে চেয়ারম্যান পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আনোয়ার হোসেন ও আব্দুল বাকির মধ্যে। এই দুই প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন।
পাঁচদনা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আনারস প্রতীকের সমর্থক হুয়মায়ুন কবির লিটন বলেন, " কাপ পিরিচের সমর্থক ও স্থানীয় আলামিনের নেতৃত্বের টিপু, দুলালসহ ১০-১২ জন কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা করে।
“আমি আনারস প্রতীকের এজেন্ট ছিলাম, আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। আমাদের লোকজনকে পিঠিয়ে আহত করা হয়েছে। আমাকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে।”
আনারস প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল বাকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমি এখন বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। খবর পেয়েছি, নুরালাপুর, কাঁঠালিয়া, চরদিঘলদী, করিমপুর ও পাঁচদোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে আনোয়ার হোসেনের কর্মীরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।"
কাপ-পিরিচের সমর্থক আলামিন অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, "আমাদেরকে লক্ষ্য করে উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন আব্দুল বাকিরের সমর্থক হুমায়ুন ও তার লোকজন।
“পরে সামান্য হাতাহাতি হয়েছে এবং আমাদের দশজনকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিয়ে পিঠিয়ে আহত করেছেন। আমরা কাউকে আঘাত করি নাই।”
কাপ-পিরিচের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখনও পর্যন্ত নির্বাচন ভালো হচ্ছে৷ কিন্তু পাইকারচর কেন্দ্র থেকে আমার একজন এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে।"
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামসুল আরেফিন বলেন, "দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। বেশ কয়েকজন আহত হবারও খবর পেয়েছি। আমরা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছি কারা এ ঘটনায় জড়িত।”
পরিবেশ এখন স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট গ্রহণ চলছে। নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ নিশ্চত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নরসিংদী সদর উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চললেও ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার মাধবদী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবদী এস পি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের নারী ভোটারদের নির্ধারিত ৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ২৯টি ভোট পড়েছে। এখানে ভোটার ৪৩১ জন। আর ৪ নম্বর বুথের ৪৫৩ জন ভোটারের মধ্যে ১২ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।
বিরামপুর এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। উপজেলা নির্বাচনেও একই হবে এমন চিন্তা করেছে, এই চিন্তা থেকে লোকজন ভোট দিতে আসেনি। আমি আমার ভোট দিতে আসছি, ভোট দিতে ভালো লাগে।"
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুকুমার চন্দ্র কর বলেন, তার কেন্দ্রে ৮ টি বুথে বেলা ১০টা পর্যন্ত মোট ৭৩টি ভোট পড়েছে।আবহাওয়ার কিছুটা খারাপ।এ কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে।
আমদিয়া ইউনিয়নের পাইকারদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ২২৫৬টি ভোটের মধ্যে ৩৫০টি ভোট পড়েছে।
নুরালাপুর ইউনিয়নের নওপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ১, ২ ও ৩ নম্বর কক্ষে নওপাড়া এলাকার নারী ভোটারদের ভোট নেওয়া হচ্ছে। এখানে মোট ভোট ১ হাজার ২৩৮ জান।
বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত ১ নম্বর বুথের ৩৯৩টি ভোটের মধ্যে ৩৩টি, ২ নম্বর বুথের ৪২১টি ভোটের মধ্যে ৫১টি এবং ৩ নম্বর বুথে ৪৫৭টি ভোটের মধ্যে ৪০টি ভোট পড়েছিল।
এ কেন্দ্রের ভোটার আছিয়া বেগম বলেন, "প্রার্থীর লোকেরা বাড়িতে গিয়া ভোট দিতে কইল। বাড়ির কাছেই কেন্দ্র, হেরলাইগা ভোট দিলাম। সুষ্ঠু হইলে ভোট দিতে ভালো লাগে।"
নরসিংদী শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
ব্রাহ্মন্দী কে কে এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দুইটি কেন্দ্র।এর মধ্যে বেলা ১০টা পর্যন্ত একটি কেন্দ্রে৪ হাজার ২১৬টি ভোটের মধ্যে ৪৮টি ভোট পড়েছে।
নরসিংদী সদর উপজেলায় মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৭ জন।