মায়ের বিজয় দাবি জাহাঙ্গীরের, ফল প্রকাশে বিলম্ব নিয়ে সংশয়

“আমি সব সেন্টারে খবর নিয়েছি; আমার মা জিতে গেছে। আমি রিটার্নিং অফিসারের অফিসে গিয়েছিলাম। কেন সে দেরি করতেছে?”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 02:55 PM
Updated : 25 May 2023, 02:55 PM

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ‘সব কেন্দ্রের মোট ফলাফলে জয়লাভ করেছেন’ বলে দাবি করছেন তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে জয়দেবপুরে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফল প্রকাশে বিলম্বের মাধ্যমে ‘জনরায় উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ বলে তার সন্দেহ।

বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার চার ঘণ্টারও বেশি সময় পরে জাহাঙ্গীর যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পর্যন্ত কেবল ১২ কেন্দ্রের মেয়র পদের ফল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের নৌকার চেয়ে ৯১ ভোটে এগিয়ে ছিল জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি।

ততক্ষণে সব কেন্দ্রের ফল পেয়ে গেছেন দাবি করে জাহাঙ্গীর বলেন, “দিনে ভোট হয়েছে, দিনে রেজাল্ট নিয়ে যেতে চাই। আমি সব সেন্টারে খবর নিয়েছি; আমার মা জিতে গেছে। আমি রিটার্নিং অফিসারের অফিসে গিয়েছিলাম, কেন সে দেরি করতেছে? তাড়াতাড়ি যেন রেজাল্টটা দিয়ে দেয়।

“আমার রেজাল্ট যদি সঠিকভাবে এখানে না দেওয়া হয়। তাদের কাছে যে রেজাল্ট শিট আছে সেটা যদি এখানে প্রয়োগ না করা হয় তাহলে তো বুঝতেই পারছেন এখানে কী হচ্ছে।”

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে গাজীপুরের মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়, মেয়াদপূর্তির আগেই হারাতে হয় মেয়র পদ।

এবারের নির্বাচনের আগে দলের ক্ষমা পেলেও মনোয়ন পাননি জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে আজমত  উল্লাকে। 

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় জাহাঙ্গীরকে আবারও বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে ঋণ খেলাপি কোম্পানির জামিনদার হওয়ার অভিযোগে।

নিজের সঙ্গে মায়ের জন্যও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। তার মা জায়েদা খাতুনের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে এখন তিনিই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

ভোটের প্রচারের পুরোটা সময় মায়ের হয়ে ভোটারদের কাছে গেছেন জাহাঙ্গীর; মায়ের মুখপাত্র হয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন।

ভোটের দিনও তিনি ছিলেন সরব। ভালো ভোট হলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সন্ধ্যা থেকে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর।

তিনি অভিযোগ করেন, তৃতীয় পক্ষ একজন ব্যক্তি ‘রেজাল্ট ঘুরিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে।

“আমি গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কাছে নিরপেক্ষ রেজাল্টটা চাই এবং কোনো কাউন্সিলর রেজাল্ট নিয়ে যেন কোনো ধরনের ছলছাতুরি না করে।”

এক পর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেন টেবিল ঘড়ির প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জাহাঙ্গীর।

কেন্দ্র থেকে হাতে লেখা ভোটের ফল নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, "হাতের লেখাটা তো অ্যালাউড না। আমার কথা হলো আপনারা প্রিন্ট কপি দেবেন না? 

“৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের ফল ঘোষণা করলেও মেয়রেরটা ঘোষণা করা হয়নি। এটা আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। যেগুলা অনিয়ম দেখছি সেগুলো আপনাদের জানাব।”

জাহাঙ্গীর বলেন, “ইভিএম পদ্ধতি আধুনিক, এটিকে আমরা সাপোর্ট করেছি। সেই হিসাবে ইভিএমের যে প্রিন্ট কপিটি বের হয় সেটি যেন আমাদের দেওয়া হয়।"

উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, "ঠিক আছে আপনারা বসেন। আমাদেরকে সহযোগিতা করেন।"

জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মা একজন নারী। নারী হচ্ছে আমার কাছে বেহেশত। সেই নারীকে যেন আমি সম্মানে রাখতে পারি। প্রত্যেকটি সন্তানকে বলছি, বাপ ভাইকে বলছি, নারীর ভোট নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি না খেলে।

“আমার মা এই শহরকে রক্ষা করবে বলেছে। আজকে সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যা ধ্বংস হয়েছে। সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”