ঢাক ঢোল পিটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় নগরবাসী।
Published : 14 Apr 2025, 04:41 PM
শোভাযাত্রা, নাচ, গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করেছে সিলেটবাসী। ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানিয়ে সোমবার সকাল ৮টায় সিলেট সার্কিট হাউসের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রাটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে সুবিদবাজারে ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় সঙ্গীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান গেয়ে নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
একই সময় নগরীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন শোভাযাত্রা বের করে। এ সময় ঢাক ঢোল পিটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় নগরবাসী।
সকালে ব্লু-বার্ড স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চলছে গান-নৃত্য। একের পর এক পরিবেশনা। নগরের বাসিন্দারা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন অনুষ্ঠানে। কেউ বসে আছেন, কেউবা দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন।
প্রতি বছরের মত শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে এবারও বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করেছে আনন্দলোক। সেখানেও দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এ ছাড়া নগরের চৌহাট্টা এলাকায় ভোলানন্দ নৈশ স্কুলের সামনে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানেও ছিল সংস্কৃতি প্রেমীদের সরব উপস্থিতি।
অন্যদিকে নগরের ক্বীন ব্রিজ এলাকার সারদা স্মৃতি হলের সামনে শ্রুতির আয়োজনে চলে গান-নাচ-আবৃত্তিসহ নানা ধরনের পরিবেশনা।
এর আগে রোববার বিকালে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের আয়োজনে নগরের ক্বীন ব্রিজ এলাকার সুরমা নদীর চাঁদনীঘাটে বাংলা ১৪৩১ সালকে বিদায় ও ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানান নানা শ্রেণি-পেশার মানুষজন।
নতুন বাংলাদেশের মালিকানা হবে সব মানুষ
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, “এ দেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব।
“রাষ্ট্র হবে সকলের। রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব উপভোগ করবে সবাই। সেই অংশীদারিত্ব পৌঁছে দেওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
সোমবার সকালে সিলেট সার্কিট হাউসের সামনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার শুরুতে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার রেজা-উন-নবী।
তিনি বলেন, “সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে সবসময় প্রতিবাদী ও আন্দোলনমুখী থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, যে পরিবর্তন জুলাই-অগাস্টে সূচিত হয়েছে, সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে।
“আর নতুন বাংলাদেশের মালিকানা হবে সব মানুষের, সর্বসাধারণের।’’
তিনি বলেন, “জুলাই-অগাস্টে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল একটি পরিবর্তনের জন্য। এখন ঐক্যবদ্ধ হলো নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। আজকে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে সার্বজনীন আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সঙ্গীত ও বৈশাখের গানের মাধ্যমে যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলাম, শোভাযাত্রার মাধ্যমে এটিকে আমরা আরও ছড়িয়ে দেব।
“পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় যে কর্মসূচিগুলো আছে, সেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা সিলেটের বর্ষবরণকে দেশের ও বিশ্বের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।”
উপস্থিত সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন বিভাগীয় কমিশনার।
শোভাযাত্রায় সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, সচিব মো. আশিক নূর, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবর্ণা সরকার, প্রধান এসেসর মো. আব্দুল বাছিত, ট্যাক্সেশন কর্মকর্তা জামিলুর রহমান এবং শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তুতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মহিলা দলের পান্তা-ইলিশ উৎসব
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্ষবরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা ও মহানগর মহিলা দলের উদ্যোগে পান্তা-ইলিশ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি বলেন, “বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা জাতীয় দিবস এবং আমাদের দেশি সংস্কৃতি পালন করতে পারি নাই। সেইসঙ্গে দলীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনও করতে পারিনি।
“আজকে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে বর্ষবরণ করতে পারছি। এটি নিঃসন্দেহ আনন্দের।”
সিলেট জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাহসিন তাহসিন শারমিন তামান্নার সভাপতিত্বে এতে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আফসর খান, মহানগর মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আছমা আলম, সহসভাপতি তানিয়া রহমান, জেলা বিএনপির সহমহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রহমান দিনা, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক স্বপন এবং মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা জামান রোজি বক্তব্য দেন।