স্থান সংকটে অনেক নথির জায়গা হয়েছে টেবিলের নীচে মেঝেতে। একটি কক্ষেই চলছে সেরেস্তা, কম্পিউটার অপারেটরসহ সবার কার্যক্রম।
Published : 30 Jan 2025, 11:31 AM
শরীয়তপুরে জেলা আদালতে বিচারক আছেন ২৩ জন। তার বিপরীতে এজলাস মাত্র ১৫টি। ফলে একই এজলাসে ধারাবাহিকভাবে বিচার কাজ করেন দুই থেকে তিনজন বিচারক। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিচারকাজ, বাড়ছে মামলাজট।
এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিচার প্রার্থীরা। একইসঙ্গে ভবন ও পর্যাপ্ত অফিস কক্ষ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আইনজীবী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও।
সরজমিনে দেখা যায়, বিচারিক হাকিম আদালতের নিজস্ব ভবন না থাকায় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ধার করাসহ ছয়টি আলাদা ভবনে ভাগাভাগি করে চলছে বিচারকাজ।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বাইরে তিনটি টিনশেড ভবন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুটি কক্ষকে এজলাস বানিয়ে নিরাপত্তাহীনভাবে চলছে নারী-শিশুসহ গুরুত্বপূর্ণ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম।
জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের নড়িয়া ও নাজির শাখায় দেখা যায়, ছোট একটি কক্ষ ভাগাভাগি করে কাজ করছেন ১৮ জন। ভেতরে মামলার নথিপত্রের বিশাল স্তূপ। স্থান সংকটে অনেক নথির জায়গা হয়েছে টেবিলের নীচে মেঝেতে। একটি কক্ষেই চলছে সেরেস্তা, কম্পিউটার অপারেটরসহ সবার কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে নাজির শাখার জারিকারক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের জারিকারকদের বসার জন্য মাত্র দুটো বেঞ্চ। আমরা এখানে কাজ করি ১৮ জন। লেখালেখি বাদে যদি আমরা গাদাগাদি করেও বসি, তাতে মাত্র আটজন বসতে পারি। বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করে।
“আইনজীবীদের কেউ এলে তাদের বসতে দিতে পারি না। আমাদের আলাদা কক্ষ খুবই দরকার।”
সংশ্লিষ্ট আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে তিন একর জায়গার ওপর চার তলাবিশিষ্ট শরীয়তপুর জেলা জজ আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়।
বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ফৌজদারি বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হত। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ আলাদা হওয়ার পরে ফৌজদারি বিচার কাজ পরিচালনার জন্য আলাদা বিচারক এবং আলাদা এজলাসের প্রয়োজন হয়।
তবে আলাদা বিচারিক ভবন তৈরি না হওয়ায় তখন থেকে ফৌজদারি বিচার কার্যক্রমে নানা রকম সমস্যা শুরু হয়।
আংগারিয়া এলাকা থেকে আসা বিচারপ্রার্থী মোতালেব বেপারী (৪৫) ও মিজানুর রহমান ঢালী (৫০) জানান, তারা পাঁচ বছর ধরে একটি মামলা নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এজলাস সংকটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সকালে আদালতে এলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজলাস যদি বাড়ানো হত তাহলে এই ভোগান্তি আর থাকত না।
আরেক বিচারপ্রার্থী দবির হোসেন বলেন, “এজলাস কম হওয়ায় বিচারকরা চাইলেই দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারেন না। এজন্য মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। একটা মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যায়।”
কক্ষ সংকটের কারণে আইনজীবী ও তাদের সহকারীদেরও নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভিড় আর হট্টগোলের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় নারী আইনজীবীদের।
আইনজীবী সাফাত মিম বলেন, “পর্যাপ্ত কক্ষ আর জায়গা না থাকায় গাদাগাদি করে কক্ষের ভেতরে ও বাইরে পুরুষ, মুহুরি, আসামিরা দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা চাইলেই তখন ভিতরে প্রবেশ করতে পারি না। আমরা চাই, আদালতের জন্য নতুন একটি ভবন তৈরি করা হোক।”
আইনজীবী কামরুজ্জামান নজরুল বলেন, “নাজির শাখায় জায়গা নেই। জারিকারকদের বসার ব্যবস্থা নেই। আমরা আইনজীবীরা সেখানে গেলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজলাস কম থাকায় একাধিক বিচারক এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে।”
শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি হানিফ মিয়া বলেন, “দেশের ৬৩ জেলায় বিচারিক ভবন থাকলেও আমাদের নেই। এজন্য বিচারকরা চাহিদামত এজলাস পান না। ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনে বিচারিক কাজ চলছে। আমরা চাই, দ্রুত একটি বিচারিক ভবন নির্মাণ করা হোক।”
“পুরোনো জজ আদালত ভবনেরও দৈন্যদশা। বিচারকদের ভাগাভাগি করতে হচ্ছে এজলাস। এতে বিলম্ব হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রম। ভবন নির্মাণ হলে এই সংকট কেটে যাবে।”
শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, “এর মধ্যে নতুন আদালত ভবনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল সার্ভে ও সয়েল টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে।
“এখন প্রকল্প অনুমোদন হলে নতুন ভবনের কাজ শুরু করা হবে। নতুন ভবন তৈরি হলে স্টাফরা সেখানে স্থানান্তর হবেন। তখন আর সংকট থাকবে না।”