রোববার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, দোকান ঘিরে মানুষের ভিড়। অধিকাংশই স্বল্প আয়ের মানুষ।
Published : 05 Nov 2024, 12:21 AM
দ্রব্যমূল্যে নৈরাজ্য ঠেকাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিএনপি নেতা মহসীন মিয়া মধুর বিনা লাভের দোকান দিয়েছেন। সেখান থেকে পণ্য কিনে সাধারণ ক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন।
শহরের নতুন বাজার এলাকায় মিরজাপুর লাইনের পুরান বাসস্ট্যান্ডে অস্থায়ী সেড নির্মাণ করে এই দোকান বসানো হয়েছে। দোকানে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, সেমাই আলুসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য ও সবজি বিক্রয় করা হচ্ছে।
রোববার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, দোকান ঘিরে মানুষের ভিড়। অধিকাংশই স্বল্প আয়ের মানুষ। দোকানে ক্রেতাদের মালামাল দেওয়ার কাজ করছিলেন মীর এম এ সালাম।
তিনি জানান, বাজারে যে চাল ৫৫ টাকায় বিক্রি হয় সেটা এখানে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১১২ টাকার ডাল ১০২ টাকা কেজি, ৬০-৭০ টাকার লাউ ৪০ টাকায়, ৪০ টাকা কেজির পেঁপে ২৪ টাকায়, ১০৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৯২ টাকায়, ৫০ টাকার সেমাইয়ের প্যাকেট ২০ টাকায়, ৫৫ টাকা হালির ডিম ৪৫ টাকায় এবং পোলট্রি মুরগি ১৮০ টাকার স্থলে ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
দোকানের দায়িত্বে থাকা কুতুব উদ্দিন বলেন, “প্রথম দিনে দুই হাজার কেজি চাল, ২০০ লিটার তেল, ২০০ কেজি চিনি, ৩০০ কেজি পেঁয়াজসহ অনান্য সামগ্রী বিক্রি করেছি।”
দোকানে পণ্য কিনতে আসা রিকশাচালক রবিন আহমদ, মমিন মিয়া, চা শ্রমিক সুবল হাজরা জানান, তারা এখান থেকে পণ্য কিনে লাভবান হচ্ছেন। অন্য জায়গা থেকে এসব পণ্য কিনলে তাদের অনেক বেশি টাকা লাগত। তারা এই ধরনের আরো উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মানুষকে এগিয়ে আসার কথা বলেন।
শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ এলাকার অর্জুন মালাকার বলেন, “বিনা লাভের দোকান থেকে যে জিনিসগুলো কিনেছি সেগুলো অন্য জায়গা থেকে কিনলে আরো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি লাগতো।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, “চমৎকার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন মহসিন মিয়া মধু। এটি একটি মানবিক উদ্যোগ। অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের নৈরাজ্য ঠেকাতে উদ্যোগটি হাতে নেওয়া হয়েছে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষরা স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন। তাদের মুখে হাসি দেখে আনন্দে বুকটা ভরে গেছে।”
মালামাল সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তিনি নিজেও এই দোকানে সহায়তা করছেন বলে জানান ইয়াকুব আলী।
এ ব্যাপারে মহসিন মিয়া মধু বলেন, “বর্তমানে সারাদেশে বাজারে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলছেন। বর্তমান সরকারও অসাধু ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে আমি পরিচিতদের নিয়ে পাইকারি মূল্যে খুচরায় নিত্যপণ্য বিক্রয়কেন্দ্র চালু করেছি। আমার একটাই লক্ষ্য, নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।”
তিনি বলেন, “এ কাজে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যতদিন পর্যন্ত নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না আসবে ততদিন পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
বিএনপি নেতা সাবেক পৌর কাউন্সিলর কাজী আব্দুল করিম বলেন, “শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তার এ দোকানে বিনাশ্রমে কাজ করছি। প্রতিদিন আমরা পালা করে এ দোকানে বসব।”
দোকানে আরও উপস্থিত ছিলেন মীর এম এ সালাম, আলকাছ মিয়া, আব্দুল জব্বার আজাদ, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম, টিটু দাস, মোবারক হোসেন, ভুট্টু মিয়া, কাজী আব্দুল গফুর, আব্দুর রহমান খান পাশা, যুবনেতা মুরাদ হোসেন সুমন, ছাত্রদল নেতা মোশারফ হোসেন রাজ।
এর আগে মহসীন মিয়া মধু তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেস লেমন মিট’ এ বিনালাভে বয়লার ও পোলট্রি মুরগি বিক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।