মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে তো আপনিই প্রচার চালাচ্ছেন, আপনার সমর্থকরাই টেবিল ঘড়ির পক্ষে প্রচার ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন- কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
জায়েদা খাতুন একজন সংগ্রামী নারী হিসেবে সিটি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তার সন্তানের ওপর যে অবিচার হয়েছে, শহরের মানুষের যে ক্ষতি করা হয়েছে, গাজীপুরের মানুষকে যে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে; তার প্রতিবাদ জানাতেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দেখুন, আমি সন্তান হিসেবে মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি। তবে আমাদের যারা সমর্থক আছেন তারাও পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ, যারা এই শহরের নাগরিক, ভালো-মন্দ বোঝেন; সেই হাজারো-লাখো মানুষ আমার মায়ের পক্ষে, টেবিল ঘড়ির পক্ষে ভোট চাইছেন, গণসংযোগ করছেন। মায়ের জন্য ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
প্রতিপক্ষ এমন প্রচার চালাচ্ছে যে, জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হলেও আপনি তার পক্ষে সিটি করপোরেশন চালাবেন-এটা কতটা সত্য?
এটাই তো স্বাভাবিক। আমি যেহেতু এই সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি, এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি, সেসব থেকে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। মা নির্বাচিত হলে আমি সার্বিকভাবে তার কাজে সহযোগিতা করবো। প্রশাসনিকভাবে মা-ই প্রধান থাকবেন। কিন্তু সার্বিকভাবে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে যত রকমের সহযোগিতা করা যায়, তা আমি করব।
আপনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে রাজনীতিতে আপনার অস্তিত্ব বড় ধরনের সংকটে পড়ল বলে মনে করেন?
রাজনৈতিক জীবনে আমি দল বা সংগঠনকে অনেক কিছু দিয়েছি। হাজার হাজার নেতা-কর্মী তৈরি করে দিয়েছি। একজন কর্মী হিসেবে, সংগঠক হিসেবে দলকে শক্তিশালী করতে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। আজ যারা আমার প্রতিপক্ষ, তারা আমার নেতা-কর্মী নিয়েই ভোট চাইতে বের হয়েছেন। আমি এ মহানগরে ৫৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৭টি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। সেইসব নেতাদের অনেকেই এখন আজমত উল্লার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। অথচ তাদের আমিই তৈরি করে দিয়েছিলাম।
দল যদি আপনাকে আর না নেয়, তাহলে আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হবে?
দল যেমন কাউকে বের করে দিতে পারে, আবার গ্রহণও করতে পারে। আমি তো দলের একজন সমর্থক। আমি জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ করি। সেই জায়গা থেকে দল কীভাবে আমাকে বাদ দেবে? সমর্থককে তো কোনো দল বাদ দিতে পারে না। চিঠি দিয়েও তো কোনো সমর্থককে বাদ দেওয়া যায় না।
আপনার পক্ষে যাওয়ায় অনেক নেতা-কর্মীকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও হয়ত করা হবে। তাদের জন্য আপনি কী করবেন?
রাজনৈতিক দলে একটি আদর্শের জায়গা থাকে। নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে, বহিষ্কার করে কখনোই কোনো সংগঠনকে শক্তিশালী করা যায় না। আমি মনে করি, কোথাও যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে সে ব্যাপারে আলোচনার সুযোগ আছে। আমার কারণে যেন কোনো নেতা-কর্মী বাদ না পড়েন। আমরা রাজনীতি করি, কেউ তো এখানে বেতনভুক্ত নই। সবাইকে নিয়ে আমি সংগঠনের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও সেটা করতে চাই। আমার কারণে কাউকে বাদ দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়।
আপনি তো দলে নেই, সিটি করপোরেশনেও নেই; তারপরও ভবিষ্যতে নগরীতে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব কীভাবে ধরে রাখবেন বলে মনে করেন?
এখন আমি মেয়র নই, দলেও কোনো পদে নেই। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনে এই যে লাখো মানুষ আমাদের সমর্থন দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে; রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটাই বড় প্রাপ্তি। সেই প্রাপ্তি নিয়েই বেঁচে আছি। আমি যে গাজীপুরের মানুষের জন্য কাজ করেছি, তাদের সেবা করেছি, রাজনৈতিক পদ নিয়ে লুটপাট করিনি, সেটা তো মানুষের কাছে প্রমাণিত। আর তাই গাজীপুরের মানুষও আমাকে সমর্থন দিয়ে চলেছেন, সেই জায়গাটা তৈরি করতে আমি সক্ষম হয়েছি।
আপনি তো বারবারই বলেছেন, আপনার প্রতি অন্যায় হয়েছে। আবার এটাও বলেছেন, দলের সভাপতি প্রতি আপনার আস্থা আছে। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো দল ও সভাপতিই নিয়েছেন? তাহলে আপনার বক্তব্য দ্বিমুখী হয়ে গেল না?
একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, আল্লাহ ও তার রাসুল ছাড়া সব মানুষেরই কিছু না কিছু ভুল হয়। মানুষের বোঝার ভুলও থাকতে পারে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার বিরুদ্ধে যারা যা বলছেন, তিনি হয়ত সেগুলো বিশ্বাস করেছেন। তিনি যদি আমার কথা শুনতেন তাহলে হয়ত দুই পক্ষের বক্তব্য তুলনা করে কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল সেটা বুঝতে পারতেন। কিন্তু সে পরিস্থিতি তো সৃষ্টি হয়নি। মানুষের ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে যে, আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমার শহরের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। আর এখন আমার মায়ের ওপর অন্যায় শুরু হয়েছে। যা করা হচ্ছে তা তো কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর কাজ হতে পারে না।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আছেন। তাদের সঙ্গে আপনার খুব একটা সখ্য দেখা যায় না- এটার কারণ কী?
যাদের কথা বলছেন তারা এখন লোভনীয় পদে আছেন। এখন বুঝবেন না, যখন তাদের চেয়ার থাকবে না তখন আমার কথাটা তারা বুঝবেন এবং শুনবেন। আমি মনে করি, জনগণ যে চেয়ার দিয়েছে, তার দায়িত্ব পাঁচ বছরের। আমরা অনেক মানুষকে অনেক বড় হতে যেমন দেখেছি, হারিয়ে যেতেও দেখেছি। তাই আজ যারা নিজেকে রাজা মনে করছে, কাল সেই রাজত্ব নাও থাকতে পারে। আমি একটা আদর্শের জায়গা থেকে লড়াই করছি। এখানে ভুল বোঝার কিছু নেই। আমাকে যারা ভুল বুঝেছে, আশা করি কিছুদিন পরে তারা নিজেরাই সংশোধন হবেন। তখন বুঝতে পারবেন যে আমার ওপর অন্যায় করা হচ্ছে।
ভোটের পরিবেশ কেমন দেখছেন, কর্মীদের কেউ ভয় দেখাচ্ছে কি? সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারবেন বলে মনে করছেন?
সব কেন্দ্রে দেওয়ার চেয়ে ১০ গুণ এজেন্ট বেশি আছে আমার। কিন্তু ঘটনা হলো, আমাদের পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তারপরও মানুষ আমার মা জায়েদা খাতুনকে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দিতে প্রস্তুত। যদি সবকিছু ভালো থাকে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার না করা হয়; তাহলে মা অবশ্যই জয় পাবেন। ভোটাররা অনেকেই মাকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি মানুষের চেহারা দেখলেই বুঝি। আমার মায়ের জন্য সবাই কাজ করছেন। অনেকে হয়ত ভয়ে প্রকাশ্যে কাজটি করতে পারছেন না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই করছেন।
এখন নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে মনে করেন কী?
না, এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এখানে যারা পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন, তারা কেউই নিরপেক্ষ নন।
নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আপনার মা কি তা মেনে নেবেন?
যদি ভোটচুরি হয় তাহলে তিনি অবশ্যই তা মেনে নেবেন না। ভোট যদি সঠিক, স্বচ্ছ হয় তাহলে ফলাফল মেনে নেবেন।
ব্যক্তি জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?
ব্যক্তি জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হলো মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা। সেই কাজটি এরই মধ্যে শুরু করেছি, আমৃত্যু তা করে যাব।