শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জীবিকা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Published : 18 Apr 2023, 10:51 PM
জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাঁচ মাস বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তাই তাদের মুখে হাসি নেই।
এই চিনিকলের প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেতন পাননি তারা। এতে অসচ্ছল শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এই এক হাজার পরিবারের প্রায় ৬ হাজার মানুষ রয়েছেন নিদারুণ কষ্টে।
কারো ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, কারো বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ধার-কর্জে জর্জড়িত হতে হচ্ছে। এর মধ্যেই পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটার চিন্তা করতে হচ্ছে। তাই তাদের মন খারাপ।
চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ আখ মাড়াই মৌসূমে লোকসান প্রায় ৭০ কোটি টাকা ও পুঞ্জীভূত লোকসান প্রায় সাতশ কোটি টাকা। সবশেষ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে এ বছর ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৭ দিন জয়পুরহাট চিনিকল (বন্ধ হওয়া রংপুর ও শ্যামপুর চিনিকল জোনের আখসহ) জোনের মোট ২৩ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়। এতে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র এক হাজার ১৯৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।
একদিকে চিনিকলের নিম্নগতি, অন্যদিকে জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি বেতন-ভাতার পরিমাণ বাড়ায় লোকসান এবং ঋণের ভারে দেউলিয়া প্রায় জয়পুরহাট চিনিকল।
এই চিনিকলের কর্মচারী মোসলেম আলী বলেন, “বন্ধ হওয়া সেতাবগঞ্জ চিনিকল থেকে সম্প্রতি আমি এই চিনিকলে বদলি হয়েছি। অবসর নেওয়ার সময় হয়েছে। এ অবস্থায় পাঁচ মাসের বেতন বাকি; নতুন জায়গা, চেনাজানা না থাকার কারণে দোকানিরা বাকি দেন না। অসুখ-বিসুখ তো রয়েছেই।
চিনিকলের কর্মচারী মাহবুবুর রহমান, খাইরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম জানান, খুব কম বেতনের চাকরি করেন তারা। এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে সেই বেতন-ভাতা ঠিকমতো পেলেও কোনো রকম দু’বেলা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হতো।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ চিনিকলটিকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে আসতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রুমেল বলেন, শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জীবিকা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন, চিনিকলের কোটি কোটি টাকার অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত যানবাহন ব্যবহারোপযোগীকরণ, আখ চাষে সহজ শর্তে ঋণদান, উচ্চ ফলনশীল আখ উৎপাদন, চিনিকল জোনের জমি বাধ্যতামূলক আখ চাষের শর্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইজারার ব্যবস্থা করা, বিদেশি চিনি আমদানি বন্ধ করা, চাষিদের যথাসময়ে আখের ন্যায্যমূল্য পরিশোধসহ যুগোপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চিনিকলটি আবার লাভের মুখ দেখবে।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আখলাছুর রহমান বলেন, “এর মধ্যে উৎসব ভাতার ব্যবস্থা হতে পারে।”