১২ বছর আগে গোপালগঞ্জ সদরের ডালনিয়া দক্ষিণপাড়ার দোলভিটার ৬০ শতাংশ জমি দখল করে নেন এক ব্যক্তি।
Published : 24 Mar 2024, 10:48 PM
দোল এলেই হরেক রং আর উৎসবে মেতে উঠত সবাই। সেখানে এখন কেবলই নীরবতা। এক যুগ আগের সেই উৎসব এখন আর নেই।
দোলের জন্য নির্ধারিত জমি অন্যের দখলে চলে যাওয়ায় এবারও দোল উৎসব হবে না বলে আক্ষেপ করেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাঝিগাতী ইউনিয়নের ডালনিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
ওই গ্রামের অতুল খাঁ বলেন, “সোমবার দোলের তিন। উৎসবের এ দিনও চলে যাবে বাকি সব দিনের মতোই।”
অতুলের মত একই আক্ষেপ জানিয়ে এক যুগ আগের সেই উৎসব ফিরিয়ে আনতে ‘দোলভিটা’ দখলমুক্ত করার দাবি গ্রামবাসীদের।
উৎসবের রং কেন হারিয়ে গেল? জানতে চাইলে তারা বলেন, হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির ১ একর ২৫ শতাংশ জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমি। এখানে প্রায় দেড়শ বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দোল উৎসব করে আসছিল। তবে ১২ বছর আগে দোলভিটার ৬০ শতাংশ জমি দখল করে নেন পাশের ডালনিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের জহুর ফকিরের ছেলে এয়ার আলী ফকির।
এখন তিনি ওই জমিতে পুকুর খনন করেছেন। তুলেছেন তিনটি ঘর। গাছও লাগিয়েছেন। এয়ার আলীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে এয়ার আলী বলেন, “ভূমিহীন হিসেবে সরকারের কাছে খাস জমি পেতে আবেদন করি। পরে এই জমির ৬০ শতাংশ দখল করি। এ জমি ভোগ-দখলের জন্য আমার আদালতের রায় রয়েছে। তবে এরমধ্যে একবার সরকার আমাকে এ জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। পরে আবার দখল করি। সরকারি জমি, সরকার চাইলে ছেড়ে দেব।”
ডালনিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের স্বপন খাঁ ও অরবিন্দু বাইন বলেন, দোল ঘিরে করে দোলভিটায় পূজা, হোলি খেলা, কবিগান, কীর্তন, গ্রামীণ মেলা বসত। সাতদিন ধরে উৎসব চলত। শুধু তাই নয়, সারা বছর ছেলেমেয়েরা দোলভিটার মাঠে খেলা করত। বিকালে গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ সেখানে সময় কাটাতেন। এয়ার আলী ফকির দোলভিটা দখলে নেওয়ার পর থেকে এখানে দোল উৎসব বন্ধ হয়ে গেছে।
গৃহিণী অমলা বাইন বলেন, “শুধু দোল উৎসব কেন? খেলাধুলা, সময় কাটানো, গরু চড়ানোসহ অন্যান্য কাজও এখন আর সেখানে করা যাচ্ছে না। সরকার দোলভিটা দখলমুক্ত করে দিলে, আমরা আবার দোল উৎসব করতে পারব।”
এয়ার আলী ফকির সরকারি খাস জমি দখল করে আগেও ২-৩টি বিক্রি করেছেন বলে সুভাষ বাইনের অভিযোগ। তিনি বলেন, “এয়ার ডালনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ নিয়ে ‘ভূমিহীন’ আক্তারের কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।”
আর ডালনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর আক্তারের কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে স্বীকারও করেছেন এয়ার আলী।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাম্মি কায়সার বলেন, “এ ব্যাপারে তহশিলদারকে তদন্তে পাঠানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”