মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার কথা জানিয়েছেন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক।
Published : 09 Apr 2023, 06:10 PM
ধর্মঘটের তৃতীয় দিনেও কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বাস মালিক-শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের সুরাহা না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এ দিকে সংকট নিরসনে শনিবার কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম জেলার বাস মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
রোববারও জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মজমপুর বাস ডিপোতে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায় যাত্রীদের।
শুক্রবার ভোর থেকে কুষ্টিয়া-খুলনা ও কুষ্টিয়া-ফরিদপুর পথে কুষ্টিয়া জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে এ ধর্মঘট চলছে।
কুষ্টিয়া সদরের কমলাপুর গ্রামের আসাবুল ইসলাম মাগুরায় চাকরি করেন। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাড়ি আসেন তিনি।
মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে যাতায়াতের খরচ ২৫০ টাকা। ধর্মঘটের কারণে আজ সকালে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাগুরায় যেতে খরচ হয়েছে ৩২০ টাকা।
“আমাদের মতো ছোটখাটো চাকরিজীবীদের এই বাড়তি খরচ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কয়েকদিন আগে ছেলে আক্তারুল ইসলামকে নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন শাহিদা খাতুন। রোববার সকালে তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড় দিয়েছে। তিনি যাবেন শেখপাড়া। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে কোনো গাড়ি পাননি। পরে তিনি অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে নসিমনে করে গন্তব্যে রওনা দেন।
কুষ্টিয়া সদরের সিএনজি স্ট্যান্ডের সিরিয়ালম্যান মতিন বলেন, “তিন দিন ধরে বাস বন্ধ। অটোরিকশাও চলছে না। অনেক মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছে। যাদের খুব দরকার তারা নসিমন-করিমনে করে গন্তব্যে যাচ্ছে। ভাড়াও অনেক বেশি পড়ছে।”
কুষ্টিয়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুল আলমের অভিযোগ, “জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে হওয়া বৈঠকের পর কুষ্টিয়ার মালিক-শ্রমিকের পক্ষ থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার সম্মতি দেওয়া হয়। তবে ঝিনাইদহের মালিক-শ্রমিরা আমাদের গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না।
“বিষয়টি দুই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে সুরাহা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোববার দুপুর পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। আমরা গাড়ি ছাড়তে প্রস্তুত আছি।”
কুষ্টিয়া জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতাদের অভিযোগ, ঝিনাইদহ মোটর শ্রমিক নেতারা কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে বাসের নতুন ট্রিপ দেওয়ার প্রস্তাব দিলে দুই জেলার শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে কথা বলতে ঝিনাইদহে গেলে কুষ্টিয়ার বাস শ্রমিকরা মারধরের শিকার হন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে কুষ্টিয়ার শ্রমিকরা কুষ্টিয়া-খুলনা ও কুষ্টিয়া-ফরিদপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।
মারধরের ঘটনায় জড়িতদের ১০ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে সারা দেশের সঙ্গে কুষ্টিয়ার বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, “যাত্রীবাহী বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।
“তিনি ঝিনাইদহের মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। আশা করছি বৈঠকে সব সমাধান হয়ে যাবে।”
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা শনিবার মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আজও তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক চলছে।
“তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার।”
আরও পড়ুন:
মিটেনি ২ জেলার মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব: কুষ্টিয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি দ্বিতীয় দিনে