“ঝিনাইদহের শ্রমিকরা আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করে, তারই প্রতিবাদে এই ধর্মঘট।”
Published : 07 Apr 2023, 04:15 PM
দুই জেলার বাস শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুর ও খুলনাগামী সব যাত্রী পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে; এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ পরিবহন ধর্মঘটের ফলে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মজমপুর বাস ডিপোতে এসে যাত্রীরা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ধর্মঘটের কারণ হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, “ঝিনাইদহ মোটর শ্রমিক নেতারা কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে বাসের নতুন ট্রিপ চাচ্ছেন। এটা নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।”
বিষয়টির সুরাহার জন্য বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া শ্রমিক পরিবহনের নেতারা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আলোচনায় বসেছিলেন বলে জানান আক্তার হোসেন।
তিনি দাবি করেন, “সেখানে ঝিনাইদহের শ্রমিকরা আমাদের শ্রমিকদের ওপর হামলা ও মারধর করে। তারই প্রতিবাদে বাস শ্রমিক-মালিক গ্রুপ উভয় মিলে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবিলম্বে হামলা ও মারধরে জড়িতদের বিচার করা না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তবে কালীগঞ্জে কুষ্টিয়ার বাস শ্রমিকদের মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ঝিনাইদহ বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান খোকন।
তিনি বলেন, কুষ্টিয়া-খুলনা পথে গড়াই পরিবহনে ঝিনাইদহ মালিক সমিতির ১৫টি বাস চলাচল করে। ঝিনাইদহ মালিক সমিতি আরও একটি বাস বাড়ানোর জন্য কুষ্টিয়া মালিক সমিতির কাছে দাবি করে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ ও কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের বৈঠক হয়।
“এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মালিক সমিতি ১৫ দিনের সময় নেয়। তারপর সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ নিয়ে দুই জেলার বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, “রোববার (২ এপ্রিল) কুষ্টিয়াতে ঝিনাইদহের একটি বাস আটকে দেয় কুষ্টিয়ার শ্রমিকরা। এর পাল্টা সোমবার (৩ এপ্রিল) থেকে ঝিনাইদহের শ্রমিকেরা ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে কুষ্টিয়ার মালিক সমিতির সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।
ঝিনাইদহ জেলার সীমান্ত শেখপাড়া থেকে খুলনা পর্যন্ত গড়াই পরিবহনের বাস চালাচ্ছেন তারা।
ফরিদপুর যাওয়ার জন্য বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সকালে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসেছেন মেহেদী হাসান। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও কোনো বাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ তিনি।
বলেন, “জনসাধারণকে জিম্মি করে এসব ধর্মঘট করা অযৌক্তিক। কিন্তু দেখার কেউ নেই।”
মেহেদি হাসানের মত আরেক অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মজমপুর বাস ডিপোতে।
কুষ্টিয়া সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুল আলম বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই ঝিনাইদহ বাস মালিক ও শ্রমিকরা অসহিষ্ণু আচরণ করে আসছে কুষ্টিয়ার শ্রমিকদের সঙ্গে। প্রায়ই তারা আমাদের শ্রমিকদের মারধর করে ঝিনাইদহ থেকে কুষ্টিয়ার বাস ফিরিয়ে দেয়। এর সমাধানে একাধিকবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেও কোনো সুরাহা হয়নি।”
তাই বাধ্য হয়ে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুল আলম বলেন, “৯ এপ্রিলের মধ্যে এর শান্তিপূর্ণ সুরাহা না হলে কুষ্টিয়া থেকে সব পথে চলাচলকারী পরিবহন শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।“
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, “কুষ্টিয়া থেকে খুলনা ও ফরিদপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি, একটা সুরাহার পথ বের হবে।”