ঘূর্ণিঝড় মোখা: সাতক্ষীরায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট বেশি

প্রশাসনের সব বিভাগকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 04:14 AM
Updated : 14 May 2023, 04:14 AM

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলের শ্যামনগর ও আশাশুনির খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদনদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চারফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে মোখা দিনে আঘাত হানায় ও গতিপথ ভিন্ন হওয়ায় উপকূলবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। কিন্তু মরাকাটাল মৌসুমেও নদ-নদীতে যে পরিমাণ পানির প্রবাহ ও জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে তাদের রাত্রি কেটেছে উৎকণ্ঠায়।

রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, এরমধ্যে মোখার অগ্রভাগ স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায়ও এর সুস্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার থেকে চলছে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত।”

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কুমার উত্তম জানান, স্থানীয় পদ্মপুকুর উপকূলবাসীকে নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় তাদের নির্ঘুম রাত্রি কেটেছে। তিনি জানান, প্রতিটি দুর্যোগে তাদের জীবন জীবিকার উপরে জোরালো আঘাত এসেছে। আইলায় পদ্মপুকুর এলাকায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। আম্পানেও তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

গাবুরা ইউনিয়নের গ্রাম্য চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম জানান, পাশ্বেমারী এলাকায় ও ইউনিয়নের প্রায় সব জায়গায় চলছে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ। তারমানে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়নকে নিরাপদ বলার কোনো সুযোগ নেই।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মাসুম আহমেদ জানান, এই ইউনিয়ন এমন কোনো দুর্যোগ নেই যখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে এবার মোখার গতিপথ ভিন্ন দিকে হওয়ায় এখনও কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়নি।

ঘূর্ণিঝড়ের শেষ পর্যন্ত তারা সচেতনতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, “জেলা প্রশাসনের সব বিভাগকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। যখন যা করণীয় তা করা হবে। মোখা মোকাবেলায় আতঙ্ক নয় আমরা সবাইকে শুরু থেকেই সতর্ক করে চলেছি।”

আবহাওয়া অফিস বলছে,রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রবর্তী অংশ সাগর থেকে স্থলভাগে উঠে আসতে শুরু করে।

ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়ার শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড়টি।

সকাল ৬টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা বন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিপ-পূর্বে এবং মোংলা বন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার বিকাল নাগাদ মোখা মিয়ানমারের সিত্তের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম শেষ করে পুরাপুরি স্থলভাগে উঠে আসতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।