শেষবারের মত প্রিয় নেতা ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ চিকিৎসককে দেখতে সকাল থেকে ভিড় করেন মানুষ।
Published : 06 Oct 2024, 09:02 PM
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও চিকিৎসক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নিজ গ্রাম মজিদপুর দয়াহাটা কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সর্বস্তরের বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তার তৃতীয় নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাটি থেকে পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা।
শেষবারের মত প্রিয় নেতা ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বরণ্যে এ চিকিৎসককে দেখতে সকাল থেকে ভিড় করেন মানুষ। অনেকেই তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জোহরের নামাজের পর নিজ বাড়ি শ্রীনগরের মজিদপুর দয়হাটায় স্কুলমাঠে চতুর্থ জানাজা শেষে গ্রামটির মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
শুক্রবার রাত পৌনে তিনটার দিকে ঢাকার উত্তরায় তার প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল ফর উইমেন অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে নানাবাড়িতে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি’) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করার পর ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
পরে তিনি লন্ডনের রয়াল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে এফআরসিপি এবং এসসিপিএস লাভ করেন।
ঢাকায় মেডিসিন বিভাগের খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি।
বি চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ নামের একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খ্যাতিমান এই চিকিৎসককে রাজনীতিতে যুক্ত করতে ১৯৭৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রথম মহাসচিব করেন। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
জিয়াউর রহমানের সরকারে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার সরকারে শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
পরে বি চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে ২০০৪ সালের ৮ মে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমৃত্যু দলটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৯৪ বছর বয়সে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের জীবনাবসান ঘটে।
নিজ গ্রামে জানাজা শেষে বাবাকে নিয়ে কথা বলেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, তার বাবার আদর্শ ছিল মানুষের কল্যাণ করা। সত্য-সুন্দরকে লালন করা। মানুষকে শ্রদ্ধা করলে বড় হওয়া যায়, আর হিংসা করলে ছোট হতে হয়।
বিকল্পধারার মুখপাত্র মাহী বলেন, “ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। তাই ক্ষমতার জোরে কাউকে ক্ষতি করতে হয় না।”
জানাজার আগে স্থানীয় নেতারাও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর স্মৃতি চারণ ও তার আত্মার শান্তি কামনা করেন।
আরও পড়ুন: