Published : 26 Aug 2024, 10:32 PM
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান করছেন, এমন অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে স্থানীয়রা।
এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা শিক্ষার্থীরা সোমবার বিকাল ৪টা থেকে হল ত্যাগ করতে শুরু করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন হল থেকে প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী চলে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, হলে যারা আছেন সবাই ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’; তাদেরকে হল ছাড়তে ‘বাধ্য করা হয়েছে’।
শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে স্থানীয় পরিচয়ে’ কয়েকশ লোক শাহপরাণ হলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসেন। বিক্ষোভ মিছিল দেখে শিক্ষার্থীরা হলের ভেতর অবস্থান নেন। মিছিল থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়।
হলে এখনো ছাত্রলীগের কর্মী আছেন, এমন অভিযোগ এনে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হল ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন তারা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তার শঙ্কায় হল ত্যাগ করেন। এ সময় অনেককে কান্না করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থী জানান, ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছাত্রলীগ মুক্ত করা হয়েছে। এরপর যারা হলে অবস্থান করেছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করেছেন। এরপরও ‘ছাত্রলীগের দালাল’ দাবি করে হল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া সত্যিই হতাশাজনক।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “দুই দিন আগে হলে আসছি, বাড়ি অনেক দূরে। এখন আবার কোথায় গিয়ে উঠব, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি৷ ভাবতেছি বন্ধুর মেসে উঠে পরের দিন বাসায় চলে যাব। কবে ক্যাম্পাস খোলা হবে তাও বুঝা যাচ্ছে না।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রিয়াজ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এখনও ছাত্রলীগের ‘দোসর’ আছে, এমন অভিযোগ এনে হল ত্যাগের দাবি জানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় জনতা।
“যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় সিটি করপোরেশনের আওতায়, তাই আমি সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যাই। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”
তবে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দলীয় রাজনীতির বিপক্ষে কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, “সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে হঠাৎ স্থানীয়রা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন।
“প্রথমে আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি। প্রতিরোধ করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের জানানো হলে, তারা হলে ফিরে যান। পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘটনায় নিজে মর্মাহত উল্লেখ করে আরেক সমন্বয়ক দেলওয়ার হোসেন বলেন, “যারা হল ছেড়েছেন তাদের সাময়িক আবাসন সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবন ও আশপাশের পরিচিত ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
এদিকে হল ছাড়ার আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে দুটি দাবি তুলে ধরেছেন।
দাবি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজেদুল করীম জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে হলে থেকে নিরাপদে বের হতে পারেন এবং হলে তাদের যেসব জিনিসপত্র রয়েছে সেসব যেন সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
দাবির বিষয়ে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।