সদর উপজেলা ইউএনও বলেন, “দুর্গা পূজা শেষ হলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিরোধ সমাধানেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
Published : 20 Oct 2023, 05:25 PM
ইসকনপন্থি ও বিরোধীদের দ্বন্দ্বের কারণে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে ১৪৪ ধারা রেখে কঠোর নিরাপত্তায় দুটি পক্ষ দুর্গা পূজা শুরু করেছে।
২০০৯ সালে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের মধ্যে হামলা ও একজন খুন হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই ১৪৪ ধারা দিয়ে এ মন্দিরে পূজার আয়োজন হয়ে আসছে বলে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন জানান।
“মন্দিরে দুর্গা পূজা করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় মন্দির ও আশপাশের এলাকায় ১৮ অক্টোবর (বুধবার) থেকে শুরু হওয়ায় ১৪৪ ধারা ২৫ অক্টোবর (দশমির পরদিন বুধবার) পর্যন্ত বলবৎ থাকবে”, যোগ করেন ইউএনও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনো মন্দিরটি ভাতগ্রামে অবস্থিত। গ্রামে ইসকনের অনেক অনুসারী রয়েছেন। মন্দিরের জমির পরিমাণ ৫৭ এক ৪৯ শতক। মন্দির ও জমি দখল করাকে কেন্দ্র ইসকনপন্থি ও বিরোধীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে।
এর জেরে ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মন্দিরে দুর্গা পূজা করা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় ফুলবাবু নামের একজন নিহত হন। এরপর মন্দিরের স্থাপনা ও চত্বরের একটি বড় অংশ ইসকনপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে যায়। মন্দির চত্বরের আরেকটি অংশ বিরোধীদের হাতে থাকে।
তারপর থেকে প্রতি বছর ১৪৪ ধারার মধ্যে ইসকনপন্থিরা মন্দিরের ভেতরে এবং বিরোধীরা বাইরের চত্বরে দুর্গা পূজার অনাড়ম্ভর আয়োজন করে আসছে।
গ্রামের কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন, নিজেদের মধ্যে এই বিরোধের কারণে এখানে উৎসবের আমেজ অনেকটাই ম্লান। ১৪ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে। এর সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরের সভাপতি ভবেশ চন্দ্র রায় শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্দিরের পুরো জমিটি সনাতন ধর্মের; কিন্তু এই জমিটি ২০০৯ সালে জোরপূর্বক ইসকনপন্থিরা দখল করতে চাইলে সংঘর্ষে আমাদের একজন নিহত হয়। পরে মন্দিরটি ইসকনপন্থিরা দখল করে নিয়েছে।
তিনি দাবি করেন, “বিষয়টি নিয়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে; আমরা রায় পেয়েছি। এরপর থেকে বিষয়টি সমাধান না করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে আসছে। আমাদের দাবি, আমাদের মন্দির আমাদের ফেরত দেওয়া হোক।
শুক্রবার ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে মন্দির চত্বরে অনাড়ম্ভরভাবে পূজার সূচনা হয়েছে বলে জানান ভবেশ চন্দ্র।
অপরদিকে মন্দিরের ইসকনপন্থিদের কমিটির সভাপতি সুপেন্দ্র নাথ রায় বলেন, “মন্দিরের সম্পত্তিটি আমাদের অর্থাৎ ইসকনের। কিন্তু সনাতনপন্থিরা এই জমিটি তাদের দাবি করে আসছে। তারা আমাদের মন্দিরে জোর করে দুর্গা পূজা করতে চায়।
“এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আইনের মাধ্যমে যেটি সমাধান হবে আমরা মেনে নেব।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, “এই মন্দির নিয়ে ইসকনপন্থি ও বিরোধীদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বসা হয়েছিল কিন্তু সমাধান হয়নি।
তিনি বলেন, “কিন্তু এবার আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি, দুর্গা পূজা শেষে দুই পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি সুরহা করা হবে।”
সদর উপজেলার ইউএনও বেলায়েত হোসেন বলেন, “দুর্গা পূজা শেষ হলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিরোধ সমাধানেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।”