তারা এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করছেন।
Published : 03 May 2024, 07:11 PM
ইউরোপের পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া আট বাংলাদেশির লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সায়েম ইমরানের উপস্থিতিতে স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।
উন্নত জীবনের আশায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মৃতরা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন ৩৫ বাংলাদেশিসহ ৫৩ জন। নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে গেলে ওই আট বাংলাদেশিসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল বিমান বন্দরে আসে আট বাংলাদেশির মৃতদেহ। মৃতরা হলেন- মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সেনদিয়া গ্রামের সজল বৈরাগী (২২), কদমবাড়ি গ্রামের নয়ন বিশ্বাস (১৮), সরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখ (২৪), কোদালিয়া গ্রামের কাজী সজীব (১৮), কেশরদিয়া গ্রামের কায়সার খলিফা (৩৫) এবং গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রিফাত শেখ (২৪), একই উপজেলার পদ্মপট্টি গ্রামের রাসেল শেখ (২৫) ও ইমরুল কায়েস আপন (২৩)।
এই আটজনকে হত্যার অভিযোগে গত ১৯ এপ্রিল সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত সজলের বাবা সুনীল বৈরাগী ।
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম মৃতদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। এসআই জাহাঙ্গীর বলেন, “দুর্ঘটনার পর তিউনিসিয়ায় তাদের ময়নাতদন্ত হওয়ায় নতুন করে আর করা হয়নি। যেহেতু এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল ঘটনা- দেশের বাইরে সংঘটিত হয়েছে। মাননীয় পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে, বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ফরেনসিক চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা হকসহ আমরা তিনজন ডেড বডিগুলোর আলামত দেখলাম।
“দেশের বাইরে যে পোস্টমর্টেম হয়েছে- তা দেখলাম। এখানে ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের উপস্থিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চেক করে, মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বলেন, ইতোমধ্যে যুবরাজ ও কামাল নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“তাদেরকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্যাবলি পাওয়া গেছে, তা যাচাই করা হচ্ছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক চক্র, এদের সাথে যাদের কানেক্টিভিটি আছে দেশে এবং দেশের বাইরে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন।”
‘এটি হত্যাকাণ্ড’
ঢাকা মেডিকেল মর্গে উপস্থিত স্বজনরা এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করছেন।
নিহত রাসেল শেখের মামা মেহেদী হাসান বলেন, এই ঘটনায় যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের কাছ থেকে শুনেছেন- ওই নৌকাটিতে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩২ জনের ধারণ ক্ষমতা ছিল।
“কিন্তু সেখানে ৫২ জন যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। নিহত এই আটজনসহ কয়েকজনকে রাখা হয়েছিল নৌকাটির পাটাতনের নিচে। দুর্ঘটনায় পড়ার পর নৌকাটিতে পানি উঠতে শুরু করলে এই আটজন আর বের হতে পারেনি।”
মেহেদী হাসান জানান, তার ভাগ্নে রাসেল সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে পাঁচবছর কাজ করেছেন। সেই জমানো টাকা দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
“সুমন নামে একজন দালালের মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকায় ইউরোপে যাবার চুক্তি করেন রাসেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকাও গেল, প্রাণও গেল। অথচ দালাল সুমন বহাল তবিয়তে লিবিয়ায় অবস্থান করছে।”
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষরাতের দিকে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপে যাওয়ার সময় ৫২ জন যাত্রী এবং একজন চালকসহ নৌকাটি তিউনিসীয় উপকূলে ডুবে যায়। এরপর জীবিত উদ্ধার করা হয় ৪৪ জনকে, ডুবে মারা যায় ৯ জন।
জীবিত উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি ও আটজন পাকিস্তানের, পাঁচজন সিরিয়ার ও চারজন মিসরের। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ বাংলাদেশি ছাড়াও এক পাকিস্তানি আছেন।
আরও পড়ুন: