“যে ট্রান্সফরমার দিয়ে বান্দরবানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেটির প্যানেল বন্যার পানিতে ডুবে ছিল।”
Published : 10 Aug 2023, 06:13 PM
ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে সরবরাহ কেন্দ্র ডুবে টানা চারদিন অন্ধকারে থাকার পর বান্দরবানে বিদ্যুৎ ফিরেছে; এর মধ্য দিয়ে বন্যা কবলিত শহরবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের মধ্যে রোববার রাতে বান্দরবান জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বুধবার থেকে পানি কমতে থাকলেও গোটা জেলা ছিল বিদ্যুৎহীন। সংকট চলছিল ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কেও।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বান্দরবানের বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী দীপ্ত চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, “যে দুটি ট্রান্সফরমার দিয়ে বান্দরবানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেই দুটি ট্রান্সফরমারের প্যানেল বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ কারিগরি টিম এসে বুধবার রাত থেকে মেরামত করেছে।
“বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার শুরু করা গেছে।”
এদিকে বানের পানি কমতে শুরু করায় টানা তিনদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর বান্দরবান শহর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে; তবে এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার তিন উপজেলা।
ইন্টারনেট ব্যবস্থা আংশিক ফিরেছে; কাজ করছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। সকাল থেকে রবি, এয়ারটেল ও টেলিটক মোবাইল নেটওয়ার্ক একটু ভাল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে বান্দরবানে বন্যায় ও পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে; নিখোঁজ রয়েছে দুজন এবং আহত হয়েছে ১৭ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্যা পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “এরই মধ্যে পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বান্দরবান সদর এবং লামা এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
“এখন পর্যন্ত রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলা ছাড়া অন্য তিন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হয়েছে। ঢাকা থেকেও কয়েকটি বাস যাওয়া-আসা করেছে।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও যাত্রীরা অটোরিকশায় করে আসা-যাওয়া করছেন। সকাল থেকে বান্দরবান-কক্সবাজার পথেও নিয়মিত বাস চলাচল করছে। আলীকদম-লামা থেকে চকরিয়া সড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়েছে।”
তবে চট্টগ্রামমুখী সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামমুখী বাস না থাকায় যাত্রীরা কেরানীহাট পর্যন্ত বাস, অটোরিকশা এবং জিপে করে আসা-যাওয়া করছেন।
এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিতে বান্দরবান শহরে গোটা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসগুলোতে কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বুকসমান পানি উঠে যায়। বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে যায় নিম্নাঞ্চলে শত শত বসতবাড়িও।
এ ছাড়া রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলা সদরে সরকারি অফিস ও ঘরবাড়িও পানিতে ডুবে যায়। এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলা। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং খাদ্যগুদাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়।
বুধবার থেকে ভারি বৃষ্টি না থাকায় বান্দরবানের সব নিম্নাঞ্চল এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। তবে সরকারি অফিস-আদালত, দোকানপাট এবং ঘরবাড়িতে জমে যায় কাদাপানি। দুদিন ধরে জমে থাকা কাদামাটি পরিষ্কার করতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনদের।
বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি নেমে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের মত লোকজনের চলাচল বেড়েছে। এলাকায়-এলাকায় গাড়িতে করে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় শহরের অধিকাংশ লোকজনকে জেনারেটর চালিয়ে মোবাইল চার্জ এবং পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে।
বান্দরবান পূরবী-পূর্বানী বাস মালিক সমিতির সদস্য ঝন্টু দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি মাত্র স্বাভাবিক হয়েছে। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে থাকায় এখনও সব চালক স্টেশনে আসতে পারেননি। যখন যে ড্রাইভার আসেন তাকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। সকাল থেকে চট্টগ্রামে বাস যাচ্ছে। তবে চালকরা সবাই না আসায় গাড়ি কম ছাড়তে হচ্ছে।”
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব হচ্ছে
বন্যায় বান্দরবানের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, “এখানে কৃষি বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ রয়েছে। তাদেরকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যান্য সব অঞ্চল থেকে পানি সরে গেলে তারা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আমাদের জানাতে পারবে। তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব আমরা। এরপর পুনর্বাসনসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ৫০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানিও বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী ঘাটতি নেই। পরিস্থিতি এখনও অনূকুলে রয়েছে।