বিনা ধান-২৬ এর চালে অন্য ধানের থেকে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৬.৪ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৯.৪ মিলিগ্রাম বেশি।
Published : 16 Dec 2024, 12:52 AM
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও পুষ্টিতে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিনা।
নতুন উদ্ভাবিত বিনা ধান-২৬ প্রোটিন ও অ্যামাইলোজ সমৃদ্ধ। এ ধান থেকে তৈরি চালের ভাত খেলেই শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন মিলবে বলে বিনা গোপালগঞ্জ উপ-কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিনা ধান-২৬ এর চালে অন্য ধানের থেকে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৬.৪ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৯.৪ মিলিগ্রাম বেশি। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল রোপা আমনের জাত। জাতটি ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। তাছাড়া জাতটিতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত যে কোনো জাতের চেয়ে অনেক কম।
কামরুজ্জামান বলেন, গোপালগঞ্জে ১০টি প্রদর্শনী প্লটে এ বছর নতুন জাতের বিনা ধান-২৬ চাষাবাদ করা হয়। এ জাতের ধান হেক্টরে ৬.২৫ টন ফলন দিয়েছে। ধানটি স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন। হেক্টরে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন ফলন দিতে সক্ষম। তাই অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন।
বিনা গোপালগঞ্জ উপ-কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌরভ অধিকারী বলেন, বিনা ধান-২৬ বাংলাদেশর প্রথম প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের জাত। গোপালগঞ্জে এ জাতটির প্রথম চাষাবাদে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। কৃষক প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছে। খাদ্যের মাধ্যমে মানবেদেহে পুষ্টির চাহিদা পুরণ করবে এ ধান। বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিহীনতা দূর করতে এ ধান ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাসাবাড়ি গ্রামের কৃষাণী নাদিরা বেগম বলেন, “আমি গত বছর স্থানীয় জাতের আমন ধান আবাদ করেছিলাম। তাতে হেক্টর প্রতি মাত্র দুই টন ফলন পয়েছিলাম। এ বছর প্রোটিন সমৃদ্ধ বিনা ধান-২৬ আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৬.২৫ টন ফলন পেয়েছি। স্থানীয় জাতের তুলনায় এ জাত তিন গুনেরও বেশি ফলন দিয়েছে।
“রোপণের ১১৫ দিনের মাথায় ধান ঘরে তুলতে পেরেছি। এরপর ওই মাঠে সবজি করেছি। সবজি বিক্রি শেষ হলে বোরো ধান করব। এ ধানের কারণে বছরে এক জমিতে ৩-৪টি ফসল করতে পারছি। অধিক ফসল উৎপাদন করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের ভাল ফলন দেখে প্রতিবেশি কৃষকরা এ ধানের আবাদ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
বিনা ধান-২৬ আবাদ সম্প্রসারিত হলে জেলাবাসীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার। তিনি বলেন, এ ধানের চালের ভাত খেলে শর্করার সঙ্গে হাই প্রোটিন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিনা উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল। তাই আমরা গোপালগঞ্জে বিনা উদ্ভবিত ধান চাষাবাদ সম্প্রসারণ করছি। বিনার ধান আবাদ করে অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এটি আমাদের কৃষির অন্যতম সাফল্য।