১৮৩৭ সাল নাগাদ শহরে এই মিষ্টি প্রথম তৈরি হয় বলে স্থানীয় মিষ্টি ব্যবাসয়ীরা জানান।
Published : 29 Sep 2024, 10:44 PM
ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘ছানামুখী’ মিষ্টি।
সুস্বাদু চতুর্ভূজ আকৃতির এই মিষ্টির সুনামের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) থেকে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করার বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। যার জিআই নম্বর ৪১।”
জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, ছানামুখীকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সাবেক জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম উদ্যোগ নেন। এজন্য ডিপিডিটি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান তিনি। ওই চিঠিতে ছানামুখীর বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা এবং উৎপাদন পদ্ধতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
মূলত কোনো দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- সেক্ষেত্রে ওই পণ্যটিকে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
‘ছানামুখী’ মিষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দুলাল মোদক দাবি করেন, কাশিধামের শ্রী মহাদেব পাঁড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘ছানামুখী’ মিষ্টির প্রবক্তা। তিনি কোলকাতার তার ভাই দুর্গা প্রসাদের মিষ্টির দোকানে কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন। তখন শহরের মেড্ডার শিবরাম মোদক তার মিষ্টির দোকানে মহাদেবকে নিয়ে যান।
মহাদেব সেখানে দুটি মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। একটি হচ্ছে ‘ছানামুখী’; আরেকটি ‘লাল রসগোল্লা’। ১৮৩৭ সালের পর কোনো এক সময়ে ভারতের বড় লাট ও তার স্ত্রী মিসেস লেডি ক্যানিং ‘ছানামুখী’ এবং ‘লাল রসগোল্লা’ খেয়ে খুব প্রশংসা করেন। এরপর থেকে লাল রসগোল্লা ‘লেডি ক্যানি’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
দুলাল জানান, এক কেজি ‘ছানামুখী’ তৈরিতে সাত থেকে আট কেজি গাভীর দুধ প্রয়োজন হয়। পাউডার দুধ দিয়ে ‘ছানামুখী’ হয় না।
প্রথমে দুধকে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে ছানায় পরিণত করতে হয়। পরে অতিরিক্ত পানি ঝরার জন্যে ছানাকে কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখার পর ছানা শক্ত হয়ে যায়। পরে শক্ত ছানাকে ছুরি দিয়ে চতুর্ভুজ আকৃতি করে কাটা হয়।
সবশেষ চুলায় কড়াই বসিয়ে তাতে পানি, চিনি ও এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে শিরা তৈরি করা হয়। ছানার টুকরোগুলো চিনির শিরায় ফুটিয়ে বড় পাত্রে রেখে পাখার নিচে ঠাণ্ডা করলে ‘ছানামুখী’ হয়।
বর্তমানে প্রতি কেজি ‘ছানামুখী’র দাম ৭০০ টাকা।
‘ছানামুখী’ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি জেলাবাসী। পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত মিষ্টি কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও।