৫ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকায় ‘বিএনপি নেতাদের সহায়তায় পালালেন ওরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
Published : 15 Sep 2024, 11:46 PM
কুমিল্লায় সংবাদ প্রকাশের জেরে মানহানির অভিযোগে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিএনপির এক নেতা।
রোববার দুপুরে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন অ্যাডভোকেট ফজলুল কবির। তিনি কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
মামলায় কুমিল্লার পুরনো সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ এর সম্পাদক বাকীন রাব্বি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা এবং পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক তৈয়বুর রহমান সোহেলকে আসামি করা হয়েছে।
‘আমোদ’ পত্রিকাটি ১৯৫৫ সাল থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিন আর তৈয়বুর রহমান সোহেল প্রতিদিনের বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মাসুদ হাসান জানান, আদালত মামলাটি তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে কুমিল্লার সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা দ্রুত মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকায় ‘বিএনপি নেতাদের সহায়তায় পালালেন ওরা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেই সংবাদে বলা হয়, কুমিল্লা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন বাহার, তার মেয়ে সাবেক সিটি মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল হক রিন্টু, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদসহ মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ডজনখানেক নেতা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
২১ অগাস্ট বুড়িচং উপজেলার চড়ানল সীমান্ত দিয়ে এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভারতে পালান তাহসিন বাহার সূচনা। তাকে সীমান্ত পর্যন্ত যেতে সহায়তা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় তিন নেতা। তাদের মধ্যে দুজনের আদ্যাক্ষর 'আ' এবং 'ও'। একই কায়দায় তারা বাহারকেও পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন বলে বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে।
মামলায় বলা হয়, সংবাদটিতে কোনো সূত্র উল্লেখ না করে মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
মামলার সাক্ষী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম বলেন, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই মামলাটি করেছেন বাদী। সংবাদটি ছিলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা মামলাটির সঠিক তদন্ত চাই।”
সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা বলেন, “প্রকাশিত সংবাদে আমরা কারো নাম উল্লেখ করিনি। আমাদের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নিউজে আমরা কয়েকটি অক্ষর দিয়েছি মাত্র। এতে করেই মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, সুতরাং আমরা বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবেলা করবো।”
মামলার নিন্দা জানিয়ে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক বলেন, “যে সংবাদের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে সেটিতে কারও নাম নেওয়া হয়নি। আদ্যাক্ষরে লেখা হয়েছে। কেউ যদি মনে করতেন তাকে ম্যানশন করা হয়েছে, তবে সেটি তিনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে স্পষ্ট করার জন্য লিখিত অনুরোধ কিংবা প্রতিবাদ জানাতে পারতেন।
“সাংবাদিকদের বিচারের জায়গা প্রেস ইন্সটিটিউট। সেখানেও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আদালতে মামলা করা হয়েছে, যেটি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কলুষিত করবে বলে আমি মনে করছি। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”