বন্যার্তদের উদ্ধারে স্পিডবোটের ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ

“তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। অথচ ফেনীর মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের একটু মানবিক হওয়া উচিত ছিল।”

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ বেশ কিছু অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের মুখে। তাদের উদ্ধারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা, স্পিডবোট ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

চাঁদপুরে স্পিডবোট ভাড়া করতে গিয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এরই মধ্যে সেখান থেকে ৩০টি স্পিডবোট গিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়।

স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, প্রতিটি স্পিডবোটের জন্য দৈনিক তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তারপর সেটি ট্রাকে উঠিয়ে পাঠানো হচ্ছে দুর্গত এলাকায়। ট্রাক ভাড়া দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে স্পিডবোটের দুজন লোকের থাকা ও খাবার খরচও বহন করতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের।

শনিবার পর্যন্ত চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ৩০টি স্পিডবোট ট্রাকে করে ফেনীতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু শনিবার দুপুরের পর থেকে চাঁদপুরের কোথাও স্পিডবোট ভাড়ার জন্য পাওয়া যায়নি।

পরে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজেদের অর্থায়নে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নগদ টাকায় ক্রয় করে মতলব উত্তর থেকে ট্রাকে করে ফেনীতে নিয়ে যায়।

ফেনীতে বানভাসিদের উদ্ধারে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক খায়রুল আলম বলেন, “চাঁদপুর থেকে ৩০টি স্পিডবোট ফেনীতে গিয়েছে। আমাদের ট্রাকে দুটি বোট আছে। তাদের সব খরচ আমাদের বহন করতে হবে।

“তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। অথচ ফেনী জেলার মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের একটু মানবিক হওয়া উচিত ছিল। স্পিডবোট একটা বা দুইটা হোক প্রতি ট্রাকের জন্য ১০ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে। এ সময়ে এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।”

স্বেচ্ছাসেবী এইচ এম জাকির বলেন, “ঢাকা, ফেনী ও চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি সংগঠন স্পিডবোট সহযোগিতা চায় আমার কাছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে চাঁদপুরে স্পিডবোট পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বোট ম্যানেজ করে ফেনীতে ট্রাকযোগে পাঠিয়েছি। ট্রাক স্বল্পতার কারণে পাঠাতে দেরি হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “একটি বিষয় না বললেই নয়। মানুষের বিপদের সময়ে ভাড়া, পরিবহন, লেবার ইত্যাদি খাতে স্বেচ্ছায় সেবা দেবে এমনটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। সেখানে তা না করে চাহিদা বেশি দেখে মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া কাজ করে না।

“একটা স্পিডবোট ট্রাকে তুলতে লেবার চাহিদা ছয় হাজার টাকা। অথচ স্বেচ্ছাসেবীরা টেনে ট্রাকে তুলে দিয়েছে। অপরদিকে স্পিডবোটের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার করে। আর ট্রাক ভাড়া চাঁদপুর হতে ফেনী পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।”

চাঁদপুর ঘাটের স্পিডবোট চালক মো. জাকির বলেন, “আমাদের চালক কর্তৃপক্ষ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের সব খরচসহ ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন দিতে হবে।”

তবে একজন চালক বলেন, “একটা স্পিডবোট চললে দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুজনের বেতন আছে। মালিকের হয়তো তিন-চার হাজার টাকা থাকে।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “মূলত স্পিডবোট ভাড়া নির্ধারিত না। তারা এককভাবে ভাড়া নিয়ে থাকে। যেহেতু ভালো কাজে স্বেচ্ছাসেবীরা স্পিডবোটের ভাড়া নিচ্ছে। ভাড়া যাতে আরও কম নেয় সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।”