“বিভিন্ন বাড়িতে আমের গাছ রোপন করেই দায়িত্ব শেষ। গাছের যে পরিচর্যা করতে হয়; সেই বিষয়টি তাদের জানা নেই। জানারও কোনো আগ্রহও নেই।”
Published : 01 Apr 2024, 02:27 PM
ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে বরিশালের বিভিন্ন গৃহস্থের আম গাছের ফুল ঝরে গেছে; এতে আমের ফলন হচ্ছে না। কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান মালিকরাও।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আবহাওয়ার কারণে’ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয়েছে। তবে সঠিক পরিচর্যা করা হলে, এ পরিস্থিতি ঠেকানো যেত।
নগরীর চরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তার সাতটি গাছে মুকুল ধরেছিল। কিন্তু ফুল আসার পর সব কালো হয়ে ঝরে গেছে।
“এখন মুকুলের ডাটা থেকে কালো রঙের আঠালো কস পড়ে; তাই সব ডাল কেটে ফেলেছি।”
একই বাড়ির বাসিন্দা সামসুজ্জামান বলেন, তার দুইটি গাছে গত বছর প্রচুর আম হয়েছিল। এ বছর দুটি গাছেরই মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। সমস্ত গাছ কালো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে মুকুল সব পুড়ে গেছে।
চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া গ্রামের এক্সিস এগ্রো অ্যান্ড ফিসিংয়ের পরিচালক খান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আবহাওয়ার কারণে গাছে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তার বাগানে শতাধিক গাছ রয়েছে। ওই গাছেও ছত্রাক ধরেছিল।
তিনি বলেন, “ওষুধ দিয়ে ছত্রাক প্রতিহতের চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও অন্তত ৩০ ভাগ মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ৭০ ভাগ মুকুল থেকে আমের গোটা বের হয়েছে; এখন দেখি কতভাগ টেকে।”
বাবুগঞ্জের রহমত গ্রামের বাগান মালিক সামসুল ইসলাম রিয়াদের বাগানে ৬০টি আম গাছের একটিরও মুকুল ছত্রাকের কারণে টেকেনি বলে জানান।
রিয়াদের অভিযোগ, কৃষি অফিস থেকে কোনো সময় যোগাযোগ করে না। তারা যদি আগাম সতর্ক করত, তাহলে এ ধরনের ক্ষতিতে পড়তে হত না।
চরবাড়ি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনয় ভুষণ মণ্ডল বলেন, এই ঠাণ্ডা, এই গরমের কারণে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তার আওতাধীন এলাকার গাছে ছত্রাকের আক্রমণের টের পেয়ে সবাইকে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবাই স্প্রে করায় অনেক গাছের মুকুল রক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন, “আমের মুকুল আসার এক সপ্তাহ পূর্বে, মুকুল আসার পর, মটর দানা ও মার্বেল দানার সময় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। এতে আমের ভালো ফলন পাওয়া যায়।”
গাছে ছত্রাক ধরার কারণ হিসেবে ভুষণ বলেন, “বিভিন্ন বাড়িতে আমের গাছ রোপন করেই দায়িত্ব শেষ। গাছের যে পরিচর্যা করতে হয়; সেই বিষয়টি তাদের জানা নেই। এমন-কি তাদের জানার কোনো আগ্রহও নেই। যার কারণে তারা কাঙ্খিত ফল পায় না। এবার তো কোনো ফলনই পাবে না।”
এ বিষয়ে বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র কুণ্ডু বলছেন, “ছত্রাক ধরলে ওষুধ দিতে হয়। ছত্রাকের কি ধরনের আক্রমণ হয়েছে, তা না দেখে বলতো পারব না।”
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওসমান গনি বলছেন, কী পরিমাণ আম গাছে ছত্রাক আক্রমণ হয়েছে, সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে যাদের গাছে ছত্রাক ধরেছে; সেই সকল গাছের ডাল কেটে ফেলতে হবে।
আগামী বছরে ভালো ফলন ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষায় এখন থেকে পরিচর্যা শুরুর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “গাছের গোড়ায় প্রচুর পানি ও জৈব সার দিতে হবে।”
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, “তাপমাত্রার হেরফেরের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিছু কিছু গাছের ক্ষতি হয়েছে; বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমি জানতাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।”
বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলছেন, যারা এ ধরনের সমস্যায় পড়েছেন, তাদের কৃষি অফিসে এসে পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উপজেলার রহমতপুর গ্রামের একজন ছত্রাকের বিষয়ে কৃষি অফিসের কেউ সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামুনুর বলেন, “কৃষি অফিসের কেউ না গেলেও, তার উচিত ছিল যোগাযোগ করা। ওই এলাকার দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা না গেলে অন্য কাউকে পাঠানো হত।”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শও দিয়েছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।