ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনভর ভোগান্তি, গন্তব্যে না গিয়েই ফিরেছেন যাত্রীরা

সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও রোগীরা।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2023, 05:26 PM
Updated : 29 March 2023, 05:26 PM

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনভর ছিল যানজট। এতে যাত্রী ও গাড়ি চালকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

বুধবার তীব্র যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে থমকে ছিল গাড়ির চাকা। বিশেষ করে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকারে পৌঁছে।  

দিনভর দুর্ভোগের পরও যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় শত শত যাত্রী গন্তব্যে না গিয়ে মাঝ পথ থেকে ফেরেন।

রোজায় মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারী, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও রোগীরা।  

কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী বাসযাত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, “এই যানজট কখনও দেখিনি। সকাল ৭টায় রওনা হয়ে ভবেরচর এসেছি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। পুরো মহাসড়ক ছিল এলোমেলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের তৎপরতা কম ছিল। কোনো রকমে পানি দিয়ে গাড়িতেই ইফতার করেছি। ঢাকা যেতে কয়টা বাজে আল্লাহই ভালো জানেন।”

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বুধবার দুপুর ১২টার দিকে দাউদকান্দির পেন্নাই এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ বাবা, সঙ্গে মাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দেন তিনি।

মান্নান বলেন, “পেন্নাইয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ঢাকাগামী কোনো বাসই সামনে এগোচ্ছে না। স্থবির হয়ে আছে। নিরুপায় হয়ে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।” 

কুমিল্লা থেকে এশিয়া এয়ারকন পরিবহনের বাসে করে বুধবার সকাল ৯টায় রওনা দেন আবুল বাশার নামের এক যাত্রী।

দিনভর যানজটে দুর্ভোগে পড়ে ঢাকায় যেতে না পেরে রাত ৮টার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ভবেরচর থেকে কুমিল্লায় ফিরে যাচ্ছেন তিনিও।

আবুল বাশার বলেন, “আমার জীবনে এমন দুর্ভোগে কখনও পড়িনি। ঢাকা না গিয়ে মধ্য পথ থেকে ফিরে আসাও জীবনে প্রথম। সকাল ৯টায় রওনা করে দাউদকান্দির গৌরীপুর গিয়েই যানজটে আটকা পড়ি। মেঘনা-গোমতী সেতুর উপর বাস দাঁড়িয়ে ছিল অন্তত তিন ঘণ্টা। ইফতারের আগে কিছু দূর গিয়ে আবারও থমকে দাঁড়ায় বাস। তাই বাধ্য হয়ে ভবেরচর থেকে ফিরে যাচ্ছি।”

মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানান, লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় মঙ্গলবার রাত ২টা থেকে তীব্র যানজট দেখা দেয়। রাতে দাউদকান্দির আহমেদাবাদ থেকে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। বুধবার প্রায় দিনভর থমকে ছিল মহাসড়ক। এক পর্যায়ে যানজট কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা নিয়ে ছাড়িয়ে যায়।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের এসপি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, “আমাদের এরিয়া শুরু মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে। আমাদের অংশ কোনো যানজট হয়নি। যেটা তৈরি হয়েছে সেটা নারায়ণগঞ্জে স্নানোৎসবের কারণে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। রাতের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে।”

কালাম হোসেন নামে ওই মহাসড়কের এক বাসচালক বলেন, “যন্ত্রণার একটা দিন কাটাইছি।সকাল সাড়ে ৬টায় কুমিল্লা থেকে রওনা করে রাত সাড়ে ৮টায় মেঘনা সেতু এলাকায় আসছি। রমজানে যাত্রীদের এমন ভুগান্তিতে নিজেরে অসহায় মনে হইতেছে। যানজট নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড তুরি। এমন ভুগান্তির মইধ্যে গত ২০ বছরে পড়ি নাই। অন্য সময় দিনে তিনবার আসা-যাওয়া করা যায়। মঙ্গলবার মাঝ রাইত থেইকাই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।”