আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ নিয়ে চতুর্থ দফায় আগুন দেওয়া হল কারখানাটিতে।
Published : 06 Sep 2024, 11:36 PM
আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীর কারখানা আরেক দফা লুটপাটের পর আবার আগুন দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় ভেতরে থাকা ভাঙা যন্ত্রাংশ লুটপাটের পর পূর্বপাশে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা কর্মীরা।
এ নিয়ে চতুর্থ দফায় আগুন দেওয়া হল কারখানাটিতে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান বলেন, “সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে কারখানাটির ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়।”
গত বুধবারও রাত দেড়টার দিকে কারখানার পূর্ব পাশের আরেকটি অংশে আগুন দেওয়া হলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নেভানো।
একজন নিরাপত্তা কর্মী বলেন, “এই কারখানায় আর কোনো নিরাপত্তা নাই। পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সেই ২৫ অগাস্ট থেকে কারখানাটি লুটপাট চলতেছে। বুধবার রাতে আগুন দেওয়ার সময় থামাতে গেলে আমার দিকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে।
“আজকে লুটপাটের পর আগুন দেয় লোকজন। যারা লুটপাট করতেছে তারা সবাই আশপাশের বাসিন্দা।”
নিরাপত্তার শঙ্কায় তিনি আর চাকরি করবেন না বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই কারখানায় আমার নিজেরই এখন সেফটি নাই, আমি গার্ড দিব কীভাবে?”
যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “গত ২৫ অগাস্টের পর থেকে কারখানাটিতে শিল্প পুলিশের সদস্যরা মোতায়েন আছেন। আগুনের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিল্প পুলিশ-৪ এর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “কারখানাটি অন্তত ৫০ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে, কিন্তু চারদিক দিয়ে খোলা। যে কোনো জায়গা দিয়ে লোকজন ভেতরে ঢুকে পড়ছে। নিরাপত্তার জায়গা থেকে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।
“আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনি তো পুলিশের বর্তমান সিচুয়েশন সম্পর্কে জানেন।”
গত ৫ অগাস্ট তুমুল গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই গাজী গ্রুপের কারখানাটি লুটপাটের শিকার হয়। শত শত মানুষ ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভ্যান, হিউম্যান হলারে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মালামাল নিয়ে যায়।
৮ অগাস্ট পর্যন্ত গাড়ির টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানায় লুটপাট চলে।
২৫ অগাস্ট গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হলে আবার লুটপাট চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। সেদিন আগুন দেওয়া হলে প্রায় দুইশ মানুষ নিখোঁজ থাকে। তারা সবাই পুড়ে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাঁচদিন পর এই ভবনের আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়। এই সময় সময় ধরে জ্বলা আগুনে তাদের দেহাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে ভেতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব নয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
তবে গত ১ সেপ্টেম্বর বিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কারখানার নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে পোড়া ভবনটিতে ঢুকে পড়েন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা।
তারা ভবনটির তৃতীয় তলায় বেশকিছু মানুষের হাড় ও মাথার খুলি পান বলে দাবি করেন। পরে তারা এসব থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “সবকিছু মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছি। দুবারই আমরা ফায়ার সার্ভিসকে কল দিয়েছি, তাদের নিরাপত্তা দিয়ে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু এই লুটপাটের বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের তো কর্তব্য রয়েছে, তারাই তো এই ঘটনাগুলোতে জড়াচ্ছে।”