বিএনপির সমাবেশের আগে খুলনায় পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি

জেলার পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-খুলনা রুটের বাস ঢাকা থেকে যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলছে; আর সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলো চলছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2022, 08:59 AM
Updated : 21 Oct 2022, 08:59 AM

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে দুইদিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এই ধর্মঘটের ফলে সাধারণ নাগরিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে খুলনায় কোনো বাস প্রবেশ করতে পারছে না। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এ পরিবহন ধর্মঘট।

শুক্রবার সকালে খুলনার বাস টার্মিনাল ঘুরে অধিকাংশ পরিবহন কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে। সেখানে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-খুলনা রুটের বাস ঢাকা থেকে যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলছে। সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলো চলছে। তবে যেগুলো খুলনা হয়ে চলে, সেগুলো বন্ধ রয়েছে। মূলত খুলনায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে ও খুলনা থেকে কোনো রুটে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না।

সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।

তবে বিএনপি বলছে, তাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ও বিপুল মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে ষড়যন্ত্র করে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা আগেই খুলনা শহরে আসতে শুরু করেছেন।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, “বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সে কারণে আমরা কোনো গাড়ি চালাচ্ছি না।”

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিয়োগ পরীক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন সবচেয়ে বেশি। সব রুটের বাস বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ইজিবাইক ও ভ্যানে করে ভেঙে ভেঙে খুলনায় আসেন তারা।

খুলনা শহরে সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা সাতক্ষীরার আরজু রহমান বলেন, “খুলনায় কোথাও থাকার জায়গা নেই। তাই পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকেই আসতে হয়েছে। গাড়ি না চলায় ইজিবাইক, ভ্যানে কষ্ট করে খুলনায় পৌঁছেছি। পরীক্ষা শেষে আবার আমাকে কষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হবে।”

ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা তানভীর আহমেদ বলেন, “রাজনৈতিক কারণে বাস ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এখন আমি কি ভাবে ঢাকায় যাবো তাই ভাবছি। আমার যত কষ্টই হোক যেতেই হবে।”

শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন খুলনা শহরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে ওই সমাবেশ হবে। সমাবেশ ঘিরে দল থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাবেশের অনুমতিও দিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।”

সমাবেশের আগে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে লাখো মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেন বলে আশা করছেন বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা।

খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুদরত-ই-আমির এজাজ খান বলেন, “খুলনার বিভিন্ন উপজেলা এবং বিভাগের অন্যান্য নয়টি জেলা থেকে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেজন্য দশ জেলার নেতাকর্মীদের বিকল্পভাবে সমাবেশে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে। বাধাবিপত্তি ঠেলে বিভাগের আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবারই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খুলনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন। কোথাও কোথাও চিড়া, গুড়-মুড়ি নিয়ে ট্রেনে, বাসে চড়ে বসেছেন কর্মীরা।”

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, নেতাকর্মীরা পুলিশের ঝামেলা এড়াতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, আবার কেউ কেউ হোটেলে অবস্থান করছেন। খুলনার এই সমাবেশ হবে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ।

খুলনার জেলা-উপজেলার মানুষ প্রয়োজনে হেঁটে এসেই সমাবেশে যোগ দেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “কোনো প্রতিবন্ধকতাই নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারবে না।”

এদিকে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলছেন, “বিএনপি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আহ্বান করেছে। এটা প্রতিহত করতে হবে বা বাধা দিতে হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। বাস বন্ধ করেছে বাস মালিক সমিতি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।”