টাউন ঈদগাহ মাঠে মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জের উদ্যোগে ‘ইসমতে আম্বিয়া আদালতে সাহাবা ও খতমে নবুওয়ত মাহফিল’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
Published : 30 Dec 2024, 08:41 PM
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় একই স্থানে দুটি পক্ষের কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।
সোমবার টাউন ঈদগাহ মাঠে মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জের উদ্যোগে ‘ইসমতে আম্বিয়া আদালতে সাহাবা ও খতমে নবুওয়ত মাহফিল’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একই স্থানে ‘দেশপ্রেমিক তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত-আহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের ডাক দেওয়া হয়।
এ রকম পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রোববার জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
সন্ধ্যায় ইউএনও মাহবুবুর রহমান বলেন, “থানার ওসির দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এটা স্থগিত রাখা হয়েছে। সভা বা মাহফিল হলে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে থানার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাই এটা করা হয়েছে।”
ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকরা অভিযোগ করেন, মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জের ব্যানারে প্রতি বছরের মত এবারও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মাহফিলটি প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
রোববার সন্ধ্যায় জামায়াত নেতাকর্মীরা ‘দেশপ্রেমিক তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ওয়াজ মাহফিল প্রতিহতের ঘোষণা দেন। এ সময় তারা সেখানে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল’ কর্মসূচির ডাক দেন।
এই অবস্থার মধ্যে ইউএনও পক্ষ থেকে এক চিঠিতে বলা হয়, “প্রাপ্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সোমবার বাদ জোহর হতে জকিগঞ্জ টাউন ঈদগাহ মাঠে মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জ কর্তৃক ইসমতে আম্বিয়া আদালতে সাহাবা ও খতমে নবুওয়ত মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বিধায় উক্ত মাহফিল অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করা গেল না। এ বিষয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।”
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, “অনুমতি না থাকায় কাউকে মাহফিল করতে দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সকাল থেকে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে টাউন ঈদগাহের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রশিদ আহমদ বলেন, “আমরা ১৭ ডিসেম্বর ইউএনও বরাবর অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। তখন আবেদন কপির রিসিভ দিয়ে ইউএনও আমাদের মৌখিকভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তারপর আমরা ওসির সঙ্গে দেখা করলেও তিনি মৌখিকভাবে অনুমোদন দেন।
“অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে আমরা বিভিন্ন স্থানে পোস্টার করে প্রচার চালিয়েছি। এর কয়েকদিন বাদে একটি দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের মাহফিল নিয়ে অপপ্রচার চালায়। তারপর ওসি আমাদের ডেকে বিষয়টি বলেন। আমরা মাহফিলটি করতে চাইলে; তখন ওসি সাহেব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না। মৌখিকভাবে অনুমতি পাওয়ার পর আমরা মাহফিলের জন্য বক্তাসহ সবকিছু ঠিক করেছিলাম।”
২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর জকিগঞ্জে এই ওয়াজ মাহফিলটি হচ্ছে জানিয়ে মাওলানা রশিদ আহমদ বলেন, “এই মাহফিল সিলেট শহরসহ সব উপজেলায় হয়। আমরা সারাদেশে মাহফিল করেছি। এবার জামায়াত-শিবিরের ছেলেরা আমাদের মাহফিল বন্ধ করার জন্য হুমকি দিয়েছে। আমাদের মাহফিল বানচাল করতে তারা একই মাঠে কর্মসূচি দিয়েছে, যার কারণে প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।”
মুসলিম যুব সমাজ জকিগঞ্জের সদস্য শিহাব উদ্দিন বলেন, “ওয়াজ মাহফিল ছিল ইসমতে আম্বিয়া শিরোনামে, এর অর্থ হল নবীগণ নিষ্পাপ। জামায়াত-শিবির নবীদের নিষ্পাপ মানে না বিধায় ইউএনওকে চাপ দিয়ে এটি স্থগিত করিয়েছে।”
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. জালাল উদ্দিন বলেন, “ওইখানে সচেতন তৌহদি জনতার ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত-আহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছিল। আমি নামাজের পর এ বিষয়ে কথা বলব।”
পরে আবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।