কয়েকটি এলাকায় গাছপালা রাস্তায় পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলো সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছেন।
Published : 10 May 2024, 01:17 AM
কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ফরিদপুরের তিনটি উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও কয়েকশ’ গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় কয়েকটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে এই কালবৈশাখী বয়ে যায়। ঝড়ে এসব ইউনিয়নের ১২ থেকে ১৪টি গ্রামের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কয়েকটি এলাকায় গাছপালা রাস্তায় পড়ে যান চলাচলও ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলো সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছেন।
বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়া জানান, সন্ধ্যায় উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, মাইটকুমরা, শেখপুর, ছত্তরকান্দা, রূপাপাত ইউনিয়নের কুমরাইল, কাটাগড়, কলিমাঝি, পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া, জয়পাশা, তামারহাজি গ্রামে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে।
“এতে বেশ কিছু বাড়িঘর-গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ও চালের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঝড়।”
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান বলেন, “বৃহস্পতিবারের ঝড়ে উপজেলার টাবনি, হেলেঞ্চা, পাড়াগ্রাম, বানা, বারাংকুলা, চরডাঙ্গা এলাকায় ঘরবাড়িসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
সহস্রাইল গ্রামের বাসিন্দা তারেক আব্দুল্লাহ বলেন, “সন্ধ্যায় জরুরি ওষুধ কিনতে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে বাতাস ও মেঘের গর্জন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে সহস্রাইল স্কুল রোডে জামালের বাড়ির সামনে আমগাছ, রেন্টিগাছ ভেঙে পড়ে।
“একটু হলেই আমার মাথার ওপরই গাছ পড়তো। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। ”
প্রায় ১৫ মিনিটের ঝড়ে গ্রামের বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ শতাধিক গাছপালা ভেঙে গেছে। ঝড়ে অনেক ঘরবাড়িও লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
কালবৈশাখীতে ঘর ভেঙে টিনের আঘাতে আহত হয়েছেন আলফাডাঙ্গার বুড়াইচ গ্রামের আমেনা বেগম। তিনি বলেন, “হঠাৎ করে বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসে বাড়ির গাছপালা উপড়ে পড়ে। গাছ পড়ে ঘর ভেঙে গেছে, আমার হাত কেটে গেছে।”
আলফাডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার ওবায়দুর রহমান জানান, সন্ধ্যার কালবৈশাখী ঝড়ে বোয়ালমারীর সহস্রাইল বাজার থেকে আলফাডাঙ্গা সড়কে বড় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। এতে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
“খবর পেয়ে আমরা গাছপালা অপসরণ করেছি। এখনো কাজ চলমান রয়েছে। তবে ওই এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জানতে পেরেছি অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানাতে পারব।”
বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইস্রাফিল মোল্যা বলেন, “প্রচণ্ড বাতাসে সহস্রাইল বাজারের প্রায় ১০টি ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বাজারের অনেক ঘরে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজসহ রাখি মালামাল ছিল, সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।”
রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে কালবৈশাখীর আঘাতে ঘরবাড়ি-গাছপালা, ফসলের ক্ষেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঝড়ের পর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।”
ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোর্শেদুর রহিম বলেন, “ঝড়ে অনেক স্থানে বিদ্যুতের লাইনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কানাইপুরে আমাদের মেইন লাইনে ক্ষতি হওয়ার কারণে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ”
“তাছাড়া বোয়ালমারীর জয়পাশা, ময়েনদিয়া এলাকায় বিদ্যুতের পিলারও পড়ে গেছে। আলফাডাঙ্গারও কয়েকটি জায়গায়ও বেশ ক্ষতি হয়েছে। ”
বিদ্যুতের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় গাছপালা পড়ে বিদ্যুতের লাইনের ক্ষতি হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে বিলম্ব হতে পারে। “
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য আমরা এখনও পাইনি। তথ্য সংগ্রহে কাজ করছি।”
ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।