“এবার ইজতেমায় পোশাকধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য থাকবে।”
Published : 29 Jan 2025, 05:26 PM
নিরাপত্তার স্বার্থেই সবার মতামত নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মধ্যে সময় বেশি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহা পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
তিনি বলেছেন, “প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারীরা (মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী) মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার পর পুরো ইজতেমা এলাকা আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেব। পরে যখন বুঝবো কোনো ধরনের বিপদ বা সমস্যার সম্ভাবনা নাই-তখন আমরা দ্বিতীয় পর্বের ওনাদেরকে (সাদ) ময়দানে আসার আমন্ত্রণ জানাব।
“এ জন্যেই এবার বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের মাঝে বেশি স্পেস রেখেছি। সবার মতামত নিয়েই আমরা এ স্পেস বাড়িয়েছি।”
টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের ‘মহাসম্মিলন’ বিশ্ব ইজতেমা। তার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরিদর্শনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইজতেমা মাঠে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইজিপি।
পরে দুপুরে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের কাছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুমের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইজতেমা ঘিরে নেওয়া নিরাপত্তার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
আগের চেয়ে এবারের ব্যবস্থাপনা অনেক উন্নত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি সুদৃঢ় হিসেবে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, “এবার ইজতেমায় পোশাকধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য থাকবে। ময়দান এলাকায় র্যাবের হেলিকপ্টার টহল ছাড়াও বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড থাকবে। সাদা পোশাকে প্রচুর পরিমাণ নিরাপত্তা রেখেছি।
“এছাড়া ১৬টি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সেখান থেকে বাইনোকুলার দিয়ে পুরো মাঠ দেখবো, ১৫টি সাব কন্ট্রোল কক্ষ থাকবে, সাব কন্ট্রোল কক্ষে যে কোনো রিপোর্ট করলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।”
তিনি বলেন, “ড্রোনের মাধ্যমে আমরা পুরো এলাকা মনিটর করব যেন কোথাও কোনো ধরনের ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
“পুরো মাঠ ৩৩৫টি সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে, ৩৫টি রুফটফ থাকবে, স্থির ব্রিগেড থাকবে ৫৩টি, ২০টি মোবাইল পার্টি সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকবে, ২০টি চেকপোস্ট থাকবে- তাদের কাজ হবে যেন দুষ্কৃতকারী ময়দানে প্রবেশ করতে না পারে।”
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তাকে সাজানো হয়েছে। র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশন, সড়ক জনপথ, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় সভা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।”
তুরাগ তীরের এ ময়দানকে ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, “ফুটপাত উচ্ছেদ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে, ট্রাফিক ব্যবস্থা সুন্দর হওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক এ সড়ক দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
“মোনাজাতের দিন কোনো গাড়ি চলতে দেব না ইজতেমা এলাকায়, সেখানে গাড়ি চলাচল মুক্ত রাখবো, যেন মুসুল্লীদের কোনো সমস্যা না হয়।
এবারের ইজতেমায় কোনো অঘটন ঘটবে না আশা করে তিনি বলেন, “মাওলানা মাহফুজও জানিয়েছেন তাদের ১০ হাজার ভলান্টিয়ার থাকবেন। তারা নেতৃত্ব দিবেন, তাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।
“রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আছে। আমার বিশ্বাস যেকোনো ধরনের নাশকতা আপনাদের (সকলের) সহযোগিতায় আমরা মোকাবেলা করতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “মুসলমানরা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দ্বীন এবং দুনিয়ার কামিয়াব হাসিলের জন্য ইজতেমায় আসেন। মতদ্বৈততা মানুষের মধ্যে থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে একটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মো. আকরাম হোসেন, গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত ডিআইজি জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদুল হাসান, তাহেরুল হক চৌহান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী জাবের সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া তাবলীগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা মাহফুজুল হক ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনজুরুল করিম রনিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে অংশ নেবেন তাবলীগ জামাতের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। এই পর্বটি দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জুবায়ের অনুসারীদের মুখপাত্র মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান।
তিনি জানান, প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ পর্বের দ্বিতীয় ধাপ ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অপরদিকে দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীদের তিন দিনের ইজতেমা ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
আরও পড়ুন
তুরাগ তীর ছেয়ে গেছে সামিয়ানায়, চলছে ইজতেমার জোর প্রস্তুতি