জেসমিনের ছেলে, ভাই, মামা ও বাড়িওয়ালাসহ দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত দল।
Published : 30 May 2023, 01:01 AM
নওগাঁর সদরের চুন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল।
সোমবার বিকালে তারা জেসমিনের ছেলে, ভাই, মামা ও বাড়িওয়ালাসহ দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত ২২ মার্চ নওগাঁর মুক্তির মোড় থেকে সুলতানা জেসমিনকে (৪০) র্যাব আটক করে। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তদন্ত দলের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সার্কিট হাউস চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক ও তার ভাই সুলতান মাহমুদ।
তদন্ত দলের সদস্যদের মধ্যে নওগাঁর জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা আবু শামীম আজাদ, মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ ইমতিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানকে সার্কিট হাউসে ঢুকতে দেখা গেছে।
রাতে তদন্ত দলের সদস্য নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম বলেন, “আপাতত তদন্ত নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হচ্ছে না। আগামীকাল রাজশাহী এবং পরশু নওগাঁয় আরো তদন্ত করা হবে।”
সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক বলেন, “গত ২২ মার্চ নওগাঁর মুক্তির মোড় থেকে জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা আটকের পর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া এবং দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন কী কী ঘটেছে তার বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন।
“এছাড়া জেসমিনের বাসা থেকে জেসমিন ও জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মধ্যকার বিভিন্ন অংকের টাকা লেনদেনের কাগজপত্র আমরা পেয়েছি। সেগুলো তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার ধারণা এসব কাগজপত্র উদ্ধারের জন্যই আমার ভাগ্নিকে উঠিয়ে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে তাতে আশা করা যায় তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলে জানান।
জেসমিনের ভাই সুলতান মাহমুদ বলেন, “আটকের আগে আমার বোন সুস্থ ছিল। র্যাব আটকের পর অসুস্থ হন এবং তাদের হেফাজতে চিকিৎসা চলা অবস্থায় মারা যান। আশা করি, প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হবে এবং আমরা জেসমিনের হত্যার বিচার পাব।”
জেসমিনের শহরের চকদেবপাড়ার ভাড়া বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেসমিন মেয়ে হিসেবে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিসের যুগ্ম সচিব এনামুল হকের সাথে তার আর্থিক লেনদেনরে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে র্যাব তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং তার অকাল মৃত্যু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত।
জেসমিনের ছেলে শাহরিয়ার সৈকত তার মার মৃত্যুর পেছনে যারা দায়ী তাদের শনাক্ত করে শাস্তি দাবি করেন।
হাই কোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে।
কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ, মুখ্য বিচারিক হাকিম, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল ২৩ মার্চ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়।
এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পরের দিন ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান।