প্রায় চার ঘণ্টার অবরোধের পর রাত ৮টায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।
Published : 08 Jul 2024, 10:33 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার পৌনে ৪টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এই অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা
প্রায় চার ঘণ্টার অবরোধের পর রাত ৮টায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার।
কর্মসূচিতে অংশ নেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে মোট তিনদিন একই স্থানে অবরোধ করেন তারা।
এদিকে, অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাবুল আহমেদ নামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে মহাসড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে গাছসদৃশ একটি স্টিলের পাইপে ঝুলে প্রতীকী আত্মহত্যা করছেন।
তার গায়ে থাকা সাদা কাপড়ে লেখা ‘মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি। তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা’।
বাবুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কোটা পদ্ধতির বাতিল চাই। সেজন্য আজকের এ প্রতিবাদ। প্রতীকী অর্থে আমি আজ এ বেশে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কোটা পদ্ধতির কারণে অনেক মেধাবী ঝরে যাচ্ছে।
“এ কোটা মেধাবীদের কাছে এক ধরনের হত্যার শামিল। তাই আমার জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
আন্দোলনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, “সারা বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তৃতীয় দিনের মতো আমাদের কুমিল্লার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।”
অবস্থায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া বলেন, “যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া অবধি আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে পিছ পা হবো না। এই কোটা অবশ্যই বাতিল করতে হবে।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয় ‘আমার সোনার বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, লড়াই করো একসাথে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি।
এছাড়াও অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতেও দেখা যায়।
এদিকে যানজটে আটকে থাকা নোয়াখালী থেকে আসা ঢাকাগামী একুশে পরিবহনের বাস চালক হারুনুর রশিদ বলেন, “এভাবে প্রতিদিন আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। রোববারও তিন ঘণ্টা আটকে ছিলাম যানজটে। আজকেও একই অবস্থা।
“বাধ্য হয়ে অনেক গাড়ি কুমিল্লা শহরের ভেতর দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে যানজট আরও বাড়াচ্ছে। চালকদের পাশাপাশি যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। ”
হারিছ আহমেদ নামে এক ট্রাক চালক বলেন, “আমরা এমন দুর্ভোগ চাই না। দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। ”
কুমিল্লার ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার বলেন, অবরোধ শুরুর পরপরই শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে হাইওয়ে পুলিশ। আমাদের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনও কাজ করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়েনি।
দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই দিকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়কে কাজ করেছি আমরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার একই স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে চারদফা দাবি জানিয়ে অবরোধ তুলে নেয় তারা। গত শুক্রবার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও শনিবার রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
সবশেষ রোববার মহাসড়কের একই স্থান প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে সেদিনও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন:
কোটাবিরোধী আন্দোলন: ফের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
কোটা বাতিলের দাবিতে কুমিল্লা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট