সদর উপজেলার পইল ঈদগাহের পাশের মাঠে বসেছে ২০০ বছরের পুরনো এই মাছের মেলা।
Published : 14 Jan 2025, 11:13 PM
হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইল মাছ মেলায় এবার উঠেছে ৬০ কেজির বাঘাইড়। মাছটি দেখতে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। মাছটি মেলায় তুলেছেন সদর উপজেলার নোয়াগাঁও জালালাবাদ গ্রামের আব্দুল মান্নান।
তিনি বলছিলেন, “মাছটি ভৈরব থেকে এনেছি। দেড় লাখ টাকা দাম চাই। ক্রেতারা চাইলে কেটেও বিক্রি করতে পারি; তিন হাজার টাকা কেজি দরে বেচব।”
মেলায় শুধু বাঘাইড় নয়, বোয়াল, আইড়, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, বাউস, টাকি, পুটি, মাগুরসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ বিক্রেতারা নিয়ে এসেছেন। হাওর এলাকার দেশীয় মাছ দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিড় করে মানুষ।
মঙ্গলবার সদর উপজেলার পইল ঈদগাহের পাশের মাঠে বসেছে ২০০ বছরের পুরনো এই মাছের মেলা। সকাল থেকেই দলে দলে লোকজন মেলায় আসতে শুরু করেন। প্রতিবছরের পৌষ সংক্রান্তির দিন এ মেলা বসে। চলে পরের দিন বিকাল পর্যন্ত।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ শতাধিক বিক্রেতা মাছ নিয়ে এসেছেন। বড় বড় মাছের সঙ্গে অনেকে দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট মাছও নিয়ে এসেছেন। ব্যাপক বেচাকেনাও হচ্ছে। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। মানুষজন মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলেও ব্যস্ত সময় কাটান।
স্থানীয়রা জানান, পইল গ্রামের বৃটিশবিরোধী সংগ্রামী বিপিন পালের উদ্যোগে প্রায় ২০০ বছর আগে এই মেলা শুরু হয়। মেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেরা বড় বড় মাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন।
উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকার মাছ বিক্রেতা মুদ্দত আলী ৩০ কেজি ওজনের বাঘাইর মাছ নিয়ে এসেছেন। তিনি দাম চাচ্ছেন ৬৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, এর আগের বছরও তিনি মেলায় মাছ বিক্রি করেছিলেন।
আলাপকালে কিশোরগঞ্জের বিক্রেতা ইমরান মিয়া বলেন, “এবার বড় আকারের দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছি। এগুলোর মূল্য হাকাচ্ছি ৪৫ হাজার টাকা। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হলে বিক্রি করে দেব।”
বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী গ্রামের কাজল মিয়া জানান, তিনি মেলায় রুই মাছ নিয়ে এসেছেন। একটা মাছ ৩৫ হাজার টাকা চেয়েছেন। মেলায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে। তার আশা, এবার বেচাকেনা ভাল হবে।
মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন সদর উপজেলার কটিয়াদি গ্রামের ইকবাল মিয়া। তিনি বলছিলেন, “মেলায় প্রচুর মাছ ওঠেছে। ঘুরে ঘুরে দেখেছি। তবে এ বছর মাছের মূল্য একটু বেশি।”
একই উপজেলার ভাদেশ্বর গ্রামের শফিক আলী বলেন, “পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বোয়াল মাছ কিনেছি। গতবছরও মেলা থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে কাতল মাছ কিনেছিলাম।”
মেলায় কৃষিজাত পণ্য, শিশু-কিশোরদের খেলনা, দেশীয় ফার্নিচার, তৈজসপত্র, সবজি ও ফল, শীতকালীন পোশাক, মিষ্টান্নসহ সহস্রাধিক স্টল বসেছে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নানা আয়োজন।
মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মেলাটি এলাকার সাধারণ মানুষের একটি প্রাণের উৎসব। শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হলেও পইল গ্রামের সঙ্গে আরো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
গত বছর মেলায় প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এবার আরো বেশি বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তাজুল।