“পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে”, উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
Published : 19 Jun 2024, 08:22 PM
সিলেটে প্রধান তিন নদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা। একজনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে।
উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে জনগণের ‘পাশে থাকার‘ আশ্বাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। বলেছেন, পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বুধবার বেলা ২টার দিকে নগরীর মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চল অন্যতম। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ও প্রতিনিয়ত তিনি এর খোঁজ খবর রাখছেন।”
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা, একশ মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ কর করা হয়েছে জানিয়ে মহিববুর বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার খবর রাখছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করছে সিটি করপোরেশন। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী, সিলেটের ডিসি রাসেল হাসান, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পানিবন্দি আট লাখ
বিকালে ডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়ে আট লাখের বেশি হয়েছে। তিনটি নদী বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।
২৪ ঘণ্টা আগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল পৌনে সাত লাখ।
সিলেটের এডিসি (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে; তবে পানির লেভেল আগের থেকে বাড়েনি। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।”
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্ত মানুষের সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন।
সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৫৬টি। সেখানে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যায় উপদ্রুত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট উপজেলায়। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ২২৩ টি গ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন। প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। ৬ টি ইউনিয়নের ১১৩ টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন।
উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সকল সড়ক পানিতে ডুবে আছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। একই নদীর সিলেট শহর পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি বইছে।
সারি-গোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টেও বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু
জকিগঞ্জে বন্যার পানিতে কলা গাছের ভেলায় চড়ে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
দুপুরে উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন জকিগঞ্জ থানার ওসি জাবেদ মাসুম।
প্রাণ হারানো ৫৫ বছর বয়সী আব্দুল হালিম পিকআপ ভ্যান চালাতেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জানান, হালিম বন্যার পানিতে ভেলা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন সকাল ৯টার দিকে। তিনি পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন। বেলা ২টার দিকে শাহবাগ মুহিদপুর এলাকায় তার লাশ ভেসে উঠে।