Published : 27 Apr 2025, 09:08 PM
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
জামানতের টাকা ফেরত পেতে রোববার দুপুরে উপজেলার জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা এলাকা অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করেছেন গ্রাহকেরা।
তাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ঘুরেও ‘গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতির’ কাছ থেকে জামানতের আসল এবং লভ্যাংশের টাকা পাচ্ছেন না।
এ সময় বিক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মালিক আমজাদ হোসেনের বসতবাড়িতে ভাঙচুর করে বলে সিংগাইর থানা ওসি জে ও এম তৌফিক আজম জানান।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলায় জামশা ইউনিয়নের দক্ষিণ জামশা এলাকার এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। আশপাশের জামশা, জামির্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, তালেবপুর এবং জয়মন্টপ ইউনিয়নের শত শত গ্রাহক জামানতের টাকা জমা রাখেন।
গ্রাহকরা জানান, জামশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুল্লাহ যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন সমবায় সমিতিটি।
ওই উপজেলার ফাতেমা নামের গৃহিণী জানান, দুটো কিডনিতেই জটিলতা ধরা পড়ায় চিকিৎসা খরচ মেটাতে খামারি স্বামীর গরু-বাছুর এবং ফসলি জমি বিক্রি ও বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রির ১০ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য জামানত হিসেবে রেখেছিলেন গ্রাম মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতিতে।
তিনি বলেন, “চাহিদা বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে যেকোনো সময় তুলতে পারবেন টাকা এ ভরসায় দুই মাস মেয়াদে তিন বছর আগে রেখেছিলেন ১০ লাখ টাকা। জামানতের টাকার তিন বছর পার হলেও পাওয়া যায়নি কোনো অর্থ। এতে আটকে আছে চিকিৎসা।
“টাকা দেওয়ার পর থেকে তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেও কোনো টাকা পাইনি। যা সহায়-সম্বল ছিল সব শেষ। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।”
সেলিম মিয়া নামের আরেক গ্রাহক বলেন, “গ্রাহকের শত কোটি টাকা পাচার করে দুবাইতে ব্যবসা শুরু করেছে এই চক্র। পরিবারসহ যে কোনো সময় চলে যাবে। তারা গ্রাহকের টাকায় ব্যবসা করেছে কোথাও কোনো লস খায়নি। পাবলিকের টাকা পাবলিককে দিয়েছে।
“সমিতির ভাষ্যমতে, তাদের ফিল্ডে কোটি পাঁচেক টাকা আছে কিন্তু তারা হাজার খানেক গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে রেখেছে শত কোটি টাকা। তারা এই টাকা অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার করেছে। তাদের এই চক্রান্ত পূর্বপরিকল্পিত।”
যাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের এই অভিযোগ তারা এলাকাছাড়া। ফলে চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে জামসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সমবায় সমিতির পরিচালক গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বলেন, “টাকা-পয়সার জন্য বাড়িতে প্রতিনিয়তই লোকজন আসে। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আট থেকে নয় কোটি টাকার কথা স্বীকার করেছেন; যা গ্রাহক পায়। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে রাজনৈতিক মামলায় তিনিও গাঢাকা দিয়ে আছেন। সমিতির টাকাগুলো একাধিক জায়গায় বিনিয়োগ করা আছে। সেখান থেকে লাভ আসা শুরু হলে তিন থেকে চার বছরের ভেতর গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।”
এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, “প্রথমত কোনো সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করতে পারবে না। সমিতির নিবন্ধন থাকলে সদস্যদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে।
“এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করলে আমরা সমিতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
এদিকে ওসি তৌফিক আজম বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।